"তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে" বইয়ের কিছু কথাঃ একটি ছোট্ট গ্রামে একটা বিশালাকার প্রাচীন বটগাছ; গাছটার গুড়ি কেউ সিমেন্ট দিয়ে বাধিয়ে দিয়েছে। এই বটগাছটা নবনীর খুব প্রিয়। সে সুযোগ পেলেই এখানে চলে আসে, সিমেন্ট বাধানো গুড়িতে বসে, আপনমনে কথা বলে গাছের সঙ্গে। নবনী এ গ্রামের বাসিন্দা নয়। বাবা, মা আর ছোটবোন শ্রাবনীর সাথে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। নবনীর বাবা বন ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী জামিল চৌধুরী। বাবা হিসেবে চমৎকার একজন মানুষ হলেও স্বামীর ভূমিকায় তার অবস্থান আদর্শ নয়। নবনীর মা জাহানারার জীবনটা রান্নাঘরেই কেটে গেল। শুচিবায়ুগ্রস্ত এই নারী স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখী হতে পারেন নি, চাপা দিয়ে রেখেছেন কিছু নিজস্ব বেদনা, আর অপেক্ষায় আছেন সঠিক সময়ের। শ্রাবনী, যার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে বই পড়ে। বেড়াতে আসার সময়ও তার সঙ্গী ছিল দুই সুটকেস বই। অসাধারণ বুদ্ধিমতী এই তরুনী তার বোনকে প্রচন্ড রকমের ভালবাসে। তাই তাকে বড় আঘাত থেকে রক্ষা করতে অপেক্ষাকৃত ছোট আঘাত দিতে পিছপা হয়না। নবনীরা গ্রামে আসার কয়েকদিনের মাঝেই এসে হাজির হয় শাহেদ। রাজপুত্রের মত এই যুবকের সাথে নবনীর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তারা পরষ্পরকে ভালও বাসে, কিন্তু মাঝে মাঝে একটা আড়ষ্টতা নবনীকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।