"মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা-১ম খণ্ড" ভূমিকা: মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অবদান ও মহান আত্মত্যাগের ইতিহাসসংবলিত ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা' শীর্ষক গ্রন্থের পুনর্মুদ্রণ প্রকাশিত হওয়ার উদ্যোগে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। নতুন প্রজন্মের সদস্যদের কাছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গর্বিত ইতিহাস তুলে ধরতে এই গ্রন্থটি অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। সেই পথ ধরে প্রথম মুদ্রণ নিঃশেষিত হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে এর পরিমার্জিত সংস্করণ। সদাসংগ্রামী মনোভাবাপন্ন অথচ শান্তিপ্রিয় এই জনপদের জনগোষ্ঠী নিজস্ব জাতীয়তাবোধ ও অধিকার সমুন্নত রাখতে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। বাংলাদেশের জাতির পিতা, সংগ্রামের মহানায়ক, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আদর্শের প্রবাদপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত হয় বাঙালির অহংকারের এই স্বাধীনতা। ২৫ মার্চ কালরাত তথা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমেই শুরু হয় এদেশের মুক্তিযুদ্ধ। মহাকালের সাক্ষী এই পুলিশ লাইন্স নীরবে বহন করে চলেছে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের গৌরবগাথা। রাজারবাগে স্ফুরণ ঘটে যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের তা চেতনার আগুন হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। প্রায় সকল পুলিশ লাইন্স ও থানায় শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। মুক্তিকামী জনতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করে অকুতোভয় ও দুর্জয় বীর পুলিশ সদস্যরা। তারা স্বীকার করে নিয়েছেন সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ; বরণ করে নিয়েছেন শহীদের সম্মান। প্রায় এগারোশরও বেশি পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ আত্মদান আমাদেরকে এনে দিয়েছে স্বাধীনতা। সেই আত্মত্যাগী বীরদের মধ্যে রয়েছেন কনস্টেবল, এএসআই, এসআই এমনকি ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যও গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সেই বীর শহীদদের। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের স্মৃতি রক্ষার্থে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পুলিশের বীরত্বের ইতিহাস তুলে ধরতে স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরবদীপ্ত ইতিহাস জাতির কাছে তুলে ধরার। প্রকাশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা' শীর্ষক গ্রন্থ। প্রথম মুদ্রণ নিঃশেষে পুনর্মুদ্রিত হতে যাচ্ছে গ্রন্থটি। এই সফলতা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে আরো পেশাদারিত্ব এবং দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে চলার। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও পুলিশের অসামান্য অবদানের এক প্রামাণ্য দলিল মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা” শীর্ষক গ্রন্থটি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পুলিশ সদস্যগণ এই গ্রন্থের মাধ্যমে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কর্তব্যনিষ্ঠার নজির স্থাপনের মাধ্যমে অগ্রগতির নতুন দিগন্তে পৌছে যাবে। গ্রন্থটির পুনর্মুদ্রণ সম্পাদনাকারী জনাব হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার) পিপিএম, অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-১) ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’-কে অশেষ ধন্যবাদ। এছাড়া এই মহতী প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আমি প্রকাশনাটির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি। এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা
হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালের ১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লা এবং মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম দম্পতির ঘরে ভোরের প্রদীপ্ত সূর্য হয়ে জন্মগ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান । শৈশব থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় নিবেদিত এক প্রাণ তিনি ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা 3 গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে তিনি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন । চাকুরি-জীবনে যে কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন তাঁর সৃষ্টিশীল চিন্তা-চেতনা আর ব্যতিক্রমী কর্মস্পৃহার স্বাক্ষর । পেশাগত জীবনে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য যেমন লাভ করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, তেমনই অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও। হাবিবুর রহমান তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদকে (বিপিএম) এবং দুবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হন। এছাড়া তিনি তিনবার ‘আইজিপি গুড সার্ভিস ব্যাজ' লাভ করেন। বর্তমানে তিনি অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ পদমর্যাদায় বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বহুমুখী প্রতিভা ও অসাধারণ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হাবিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা ও সংকলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং তা সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সম্পাদনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা, পিতা তুমি বাংলাদেশ এবং ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা গ্রন্থসমূহ। বাংলাদেশের বেদে এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সমাজের মূলধারায় তাদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ। তাঁর অতল মানবিক গুণের ফসল পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, যা করোনা রোগীদের প্লাজমা এবং ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট সরবরাহ করে কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।