`সায়েন্স ফিকশন দ্য টাইম মেশিন' ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা ৮০২,৭০১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ টাইম মেশিনে উঠে পড়ে স্টার্টিং লিভারটা হাতে নিলেন তিনি....... “নিঃশ্বাস নিয়ে দাঁতে দাঁতে চেপে ধপ শব্দ করে অপসৃত হলাম। বাতি নেবানোর মতো করে রাত্রি নেমে এলো। পর মুহূর্তেই আগামীকাল এসে হাজির হলো। গতি বাড়লে কালো ডানার ঝাপটানিন মতো করে দিনের পর রাত নেমে এলো। তারপরে রাত দিনের দ্রুত আবর্তন একত্রে লীন হয়ে নিরবচ্ছিন্ন ধূসরতায় পর্যবসিত হলো।” যখন তিন থাকলেন তখন তিনি ভবিষ্যৎ কারে আটশত হাজার বছর পরিভ্রমণ করেছেন। সেখানে তিনি কী দেখতে পেয়েছিলেন সেটাই হয়ে উঠেছে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞান কাহিনীগুলোর অন্যতম। এক ভিক্টোরীয় বিজ্ঞানী যখন ৮০২,৭০১ খ্রিস্টর্বাব্দে পদার্পণ করেন প্রথমে তিনি আনন্দিত হন। কারণ দেখতে পান যে দুর্ভোগ সেখানে সৌন্দর্য, পরিতৃপ্তি আর শান্তির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। প্রথমটায় মানুষ থেকে উদ্ভুত বামন এক প্রজাতি এলয়রা তাকে আনন্দে অভিভূত করে ফেলে। শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন যে এক সময়ের মহান কিনা এখন দুর্বল এবং শিশুদের মতো অন্ধকারের প্রতি ভীত।ভীত হওয়ার যথেষ্ট কারণও তাদের আছে: তাদের স্বর্গজগতের নিচে গভীর সড়ঙ্গের ভিতরে মানুষ থেকে উদ্ভুত আরেক জাতি ওত পেতে আছে-অশুভ মরলক তারা। আর যখন সেই বিজ্ঞানীর টাইম মেশিনটা হারিয়ে যায় তখন একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে যায় যে নিজ সময়কালে যদি পত্যাবর্তন করতে হয় তাহলে এই সুড়ঙ্গগুলোর ভিতরে তাকে অবশ্যই তল্লাশী চালাতে হবে।
‘৩০০১: দ্য ফাইনাল ওডিসি’ বইয়ের ভূমিকা: ৩০০১ সালের পৃথিবী। বদলে গেছে নীতিবোধ, সমাজ, বিজ্ঞানতো বদলাবেই, সেই সাথে মানুষ। বসুন্ধরাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বিপন্নপ্রায় জীবদের জন্য। মানুষের ওজন কমলে কাজ বাড়বে, সহজ হবে সবকিছু, আবার উপরে চলে গেলে মহাকাশ ভ্রমণও হয়ে পড়বে অনেক সহজ। তাই বদলে গেছে চিরকালের আবাসস্থল। এদিকে ফিরে আসে অনেক পুরনো দিনের এক অতিথি, ২০০১ সালের চোখে সে দেখে ৩০০১ সালের মানবজাতিকে। একই সাথে সমগ্র মানবজাতি আরেক সঙ্কটের মুখে। দূরে দূরে অনেক সৌরজগত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ... কেন? পুরো স্পেস ওডিসি জুড়ে যেসব প্রশ্নের মিমাংসা হয়নি, সেসবের একটা যবনিকা নামাতে চেয়েছেন আর্থার সি ক্লার্ক এ বইতে। যেন শুধু স্পেস মিশনের নন, মহাকালেরও ধারাভাষ্যকার তিনি।
‘৩০০১ দ্য ফাইনাল ওডিসি' লেখকের কথাঃ ২০১০ : ওডিসি টু যেমন ২০০১ : আ স্পেস ওডিসি'র সরাসরি সিকুয়্যাল নয়। তেমনি ২০৬১ : ওডিসি থ্রি ও দ্বিতীয়টার সরাসরি ঝাণ্ডাবাহী নয়। বরং এই সবগুলোকে একই থিমের উপর বিস্তৃতি ধরা যায়, আর সেই অর্থে, সময়কে মাপকাঠি ধরে সিকুয়্যাল বলা যায়। কিংবা, সরলতার জন্য একই নাম ও চরিত্রঘটনা থাকা সত্ত্বেও যেন একই ঘটনা নয়, বরং সমান্তরাল চলতে থাকা বিভিন্ন ইউনিভার্সে একই ধারার ঘটনা। মানুষের চাঁদে পা রাখার বছর পাঁচেক আগে, ১৯৬৪ সালে যখন স্ট্যানলি কুবরিক প্রস্তাব রাখলেন, ‘সত্যিকার ভাল সায়েন্স ফিকশন মুভি' বানাবেন, তখন ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। কিন্তু তারপর, এ ধারণায় আগের দুটি বই বিজ্ঞানে সরাসরি অনেক প্রভাব ফেলল, ফলে বলা চলে সেগুলো সার্থক সায়েন্স ফিকশন। ২০১০ লিখতে উৎসাহী হই ১৯৭৯ সালের সফল ভয়েজার অভিযানের পর। কিন্তু বৃহস্পতিয় অঞ্চলে ভয়েজারের অভিযানের পর আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিযান গ্যালিলিও পাঠানো হয়। আশায় বুক বেঁধেছিলাম গ্যালিলিওকে নিয়ে, সে যাবে, বৃহস্পতির বাতাবরণে একটা প্রোব ছুঁড়ে দেবে, দু বছর খুঁটিয়ে দেখবে বৃহস্পতীয় উপগ্রহজগৎ। এর উৎক্ষিপ্ত হবার কথা ছিয়াশির মে মাসে। ডিসেম্বর আটাশিতে লক্ষ্যে যাবার কথা এবং উনিশশো নব্বইতে নূতন বাণীর স্রোতে ভেসে যাবার কথা আমার। হায়, চ্যালেঞ্জটা পিছিয়ে গেল, জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে গ্যালিলিও তার ক্লিন রুমে অপেক্ষার প্রহর গুণছে। আরেকটা লঞ্চ ভেহিকলের আশায় তার বসে থাকা। হয়তো নির্ধারিত সময়ের সাত বছর পর সেটা ঠিকই জায়গামতো পৌছবে, তদিন আমার ধৈর্য থাকলেই হল। গ্যালিলিওকে নিয়ে তৃতীয় স্বপ্ন দানা বেঁধেছিল, সেটায় চিড় ধরার আগেই আমি অপেক্ষা বন্ধ করে কলম হাতে নিলাম। কলম্বো, শ্ৰীলঙ্কা, এপ্রিল, ১৯৮৭সূচিক্রম: শুরুতর কথা : ক্ষণজন্মা – ১১ ক. নক্ষত্র নগরী – ১৩ ১. ধূমকেতুর রাখাল ছেলে - ১৫ ২. কে জানিত আসবে তুমি গো, অনাহুতের মতো – ১৮ ৩. আদ্যিকালের মানুষ – ২০ ৪. দৃষ্টি যায় দূরে - ২৬ ৫. শিক্ষা - ৩১ ৬. ব্রেইনক্যাপ - ৩৫ ৭. ডিব্রিফিঙ - ৪১ ৮. ওলডুভাইয়ে ফিরে দেখা - ৪৭ ৯. স্কাইল্যান্ড - ৪৯ ১০. ইকারুসের বসতবাড়ি – ৫৭ ১১. ড্রাগনের নিঃশ্বাস – ৬২ ১২. হতাশা – ৬৫ ১৩. আজব সময়ে অচেনা অতিথি – ৬৮ খ. গোলিয়াথ – ৭৫ ১৪. বিদায়, পৃথিবী – ৭৭ ১৫. শুক্রের পথে – ৮০ ১৬. কাপ্তানের টেবিল – ৮৬ গ. গ্যালিলিওর অভুবনগুলো – ৯১ ১৭. সেই গ্যানিমিড – ৯৫ ১৮. গ্র্যান্ড হোটেল – ৯৮ ১৯. মানবজাতির পাগলামি – ১০১ ২০. এ্যাপোস্ট্যাট – ১০৬ ২১. কোয়ারেন্টাইন – ১১০ ২২. গ্যানিমিড থেকে ভালবাসা – ১১৪ ঘ. সালফারের রাজত্ব – ১১৫ ২৩. ফ্যালকন – ১১৭ ২৪. এস্কেপ – ১১৯ ২৫. ছাইচাপা আগুন – ১২১ ২৬. জিয়াংভিল – ১২৪ ২৭. শূন্যতায় জমাট জল – ১২৮ ২৮. ছোট্ট সূর্যোদয় – ১৩৩ ২৯. মেশিনে ভূত – ১৩৫ ৩০. তাসের ঘর – ১৩৮ ৩১. নার্সারি – ১৪০ ঙ. সমাপ্তি – ১৪৩ ৩২. সময় এক বহতা নদী – ১৪৫ ৩৩. কন্ট্যাক্ট – ১৫০ ৩৪. বিচার – ১৫১ ৩৫. সাজ সাজ রব – ১৫৩ ৩৬. আতঙ্কের কুঠুরি – ১৫৬ ৩৭. অপারেশন যেমোক্লেস – ১৬০ ৩৮. প্রিম্পটিভ স্ট্রাইক – ১৬২ ৩৯. অমানিশা – ১৬৬ ৪০. মধ্যরাত্রি: পিকো – ১৭০ * সমাপ্তি – ১৭২ * উৎস ও কৃতজ্ঞতা – ১৭৩ * বিদায়বাণী - ১৮৪
ফ্ল্যাপে লিখা কথা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক আইজাক আসিমভের জন্ম ১৯২০ সালে রাশিয়ায়। আট বছর বয়সে চলে আসেন আমেরিকায়। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় তিনি তার গল্পে তুলে এনেছেন। আর এই কারণেই পাঠক সমাজে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তার ফাউন্ডেশন সিরিজ ‘বেষ্ট অল টাইম সিরিজের’ মর্যাদা লাভ করেছে। এছাড়াও তিনি রোবট সিরিজ, এম্পায়ার সিরিজ বহির্ভূত কিছু কল্পকাহিনী, রহস্য গল্প, ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য সমালোচনা এবং অসংখ্য ছোটগল্প লিখেছেন। নাটকফল প্রথম প্রকাশিত হল ছোটগল্প হিসেবে। বলা হয়ে থাকে যে এটি আসিমভের ৩২তম ছোট গল্প। প্রকাশিত হয় ১৯৪১ সালে। প্রকাশের সাথে সাথেই গল্পটি ক্লাসিকের মর্যাদা লাভ করে। লেখক পরিণত হন জীবন্ত কিংবদন্তীতে। ১৯৬৮ সালে সায়েন্স ফিকশন রাইটারস অব আমেরিকা ভোটাভুটির মাধ্যমে ‘নাইটফল’ গল্পটিকে নির্বাচিত করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সায়েন্স ফিকশন ছোটগল্প হিসেবে এবং এখনো সেই মর্যাদা অক্ষুন্ন আছে। ১৯৪০ সালে আসিমভ বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর প্রচলিত কাঠামো ভেঙ্গে নতুন এক ধারা প্রবর্তনের প্রয়াস শুরু করেন যেখানে জটিল এবং অতি উন্নত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বা স্পেস ট্রাভেলের মতো বিষয়গুলিকে বাদ দিয়ে হিউম্যান কন্ডিশনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি। সেই ধারারই সফল উদাহরণ ‘নাইটফল’। পরবর্তীতে বর্তমান যুগের আরেক বিখ্যাত কল্পকাহিনী লেখক রবার্ট সিলভারবর্গের সহায়তায় ছোটগল্পটিকে তিনি পরিবর্তিত কলেবরে উপন্যাসে রূপ দেন। ১৯৯২ সালে আসিমভ ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সূচীপত্র * গোধুলি বেলায় * নাইটফল * নতুন প্রভাত
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।