ভূমিকা ইতিহাসের দর্পনে জাতি দেখতে পায় নিজের রূপ ,আপন আত্নত্যাগের কাহিনী এবং অতীতের শিক্ষা থেকে বর্তমান পরিস্থিতি নিরূপন করতে সহায়তা লাভ করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের খোলস থেকে বেরিয়ে আপন স্বাধিকার অর্জনে জন্য মুক্তিপণ সংগ্রাম করেছিল। তারই কিছু কিছু ঐতিহাসিক সত্য এই সচিত্র আলেখ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো। গুরুদেবের ভাষায় , ‘জীবনের ছবি আঁকা, আর ইতিহাস লেখা এক নয়’, অথচ এই দুইয়ের মধ্যে মিল আছে। আর সেই দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়েই এই আলোকচিত্রের অ্যালবাম প্রকাশ করার ক্ষীণ প্রচেষ্টা নেয়া হলো। এই ছবিগুলো তোলার জন্য প্রতিনিয়ত যিনি আমাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তিনি হলেন ত্রিপুরার মহারাজদের বিশেষ প্রিয়ভাজন এবং ত্রিপুরার সর্বপ্রথম পেশাদার আলোকচিত্রী ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমার প্রয়াত পিতৃদেব প্রফুল্লচন্দ্র সেনগুপ্ত মহাশয়। সেই সময়ে আমার সদ্য পরিণীতা প্রিয়তমা স্ত্রী শ্রীমতি রমা সেনগুপ্তার বিলক্ষণ অনুপ্রেরণা আমাকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এই আলোকচিত্র তুলে রাখতে সর্বদা সাহস জুগিয়ে গেছে । এঁদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞতা -পাশে আবদ্ধ। বন্ধুপ্রতিম সাংবাদিক শ্রী অনিল ভট্রাচার্য ,সুলেখক বন্ধু সুবিমল রায় যাঁদের সাহচর্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিক ভাবে প্রামাণিক সত্যরূপে বইয়ের আকারে তুলে ধরতে ,তাঁদের জানাই হৃদয়ের তপ্ত ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। অনুজ বিশু সেনগুপ্ত ও শম্ভু সেনগুপ্ত ,যাঁরা আমাকে এই ছবি তোলার ব্যাপারে সদা-সর্বদা সাহায্য করেছে, ওদের প্রতি রইলো অজস্র ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। সর্বোপরি এই আলোকচিত্রগুলো আরো বহু কাল অদেখা থেকে যেতো যদি না বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা সংস্থা ‘সাহিত্য প্রকাশ’ এর পরিচালক মফিদুল হক মহোদয় এবং দৈনিক জনকন্ঠের ফিচার সম্পাদক এখলাসউদ্দিন আহমদ, জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের একজিকিউটিভ ডাইরেক্টর অনুজপ্রতিম নাজমুর হাসান, অন্যতম সহ-সম্পাদক আবীর হাসান,টিএন্ডটি মহাবিদ্যালয়েরৈ অধ্যকঊষা নাজমা সামস এঁদের সবার সহায়তা ও কৃপাদৃষ্টি আমার ওপর না পড়তো। এঁদের সকলের প্রতি এবং বাংলাদেশ ও ভারতে আমার অগণিত পরোক্ষ হিতৈষীদের প্রতি রইল অকৃত্রিম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। রবীন সেনগুপ্ত প্রশান্তি ভিলা,মধ্যপাড়া আগারতলা,ত্রিপুরা জানুয়ারি-২০০০
রবীন সেনগুপ্ত জন্ম : আগরতলা ২০ ডিসেম্বর ১৯৩০ (আদি-নিবাস বিক্রমপুর, ঢাকা) পড়াশােনা : উমাকান্ত একাডেমী ও বিশ্বভারতী। ২০ বছর বয়স থেকে পিতার সান্নিধ্যে আলােকচিত্র চর্চা শুরু। ১৯৫২ সাল থেকে ফ্রি লালার’ চিত্রসাংবাদিকরূপে স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার, যুগান্তর, স্বাধীনতা, অমৃতবাজার, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড, সত্যযুগ প্রভৃতি পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ। ১৯৫৬-৬২ সালে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবন নিয়ে ত্রিপুরার সর্বপ্রথম রঙিন চলচ্চিত্র নির্মাণ । ১৯৫৯ সালে ব্রাজিলে আলােকচিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ ও প্রথম শ্রেণীর আলােকচিত্রীরূপে স্বীকৃতি লাভ। ১৯৬২ সালে ‘দি রয়েল ফটোগ্রাফি সােসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেনের সম্মানিত সদস্যপদ লাভ। “দি ফেডারেশন অফ। ইন্ডিয়ান ফটোগ্রাফি’র ভূতপূর্ব সদস্য। ১৯৬২ সালে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশ পরিভ্রমণ। এই সময়ে তাঁরই তৈরি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দি টেইলস অফ। ট্রাইবাল লাইফ অফ ত্রিপুরা হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সেমিনারে প্রদর্শিত হয়। ব্যক্তিগতভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, ই.এম.এস. নামুদ্রিপাদ, জ্যোতি বসু-এদের স্নেহধন্য। তার সৃষ্ট ত্রিশটিরও বেশি ডকুমেন্টারি ছবির মধ্যে রয়েছে হ্যান্ডলুম অ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফটস অফ ত্রিপুরা, গ্রিমসেস অফ ত্রিপুরা, জয়তু শাস্ত্রীজি, প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা, ফোক ডান্স অফ ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, জনগণের জয়, শারদোৎসব প্রভৃতি। এইসব ছবির ধারাভাষ্যে ছিলেন কাজী সব্যসাচী ও দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রতিষ্ঠিত একজন গবেষণামূলক প্রবন্ধকার ও লেখক ত্রিপুরার স্থাপত্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি বিষয়ক বহু রচনা এই পরিচয় বহন করে। “চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরায় মুক্তিযুদ্ধ প্রামাণিক সচিত্র পুস্তকটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে।