"হাতেকলমে বিজ্ঞান" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: আমি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত এবং সবকিছুকে ‘ডিজিটাল করতে চাই বলে আমার বদনাম আছে! তারপরও এ বইতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্যটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেয়েছি। বর্তমান প্রজন্মকে প্রযুক্তির দাস নয় বরং প্রভু হতে উৎসাহিত করাটাই লক্ষ্য। কেউ হয়তাে বলতে পারে, আমি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ঐচ্ছিক কাজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারতাম; যার পক্ষে সম্ভব সে করত আর যার হাতের কাছে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযােগ নেই সে ওটুকু বাদ দিয়ে যেত। আমার উত্তর হতাে এরকম : যদি সেরকম করি তাহলে প্রযুক্তির সুবিধাবঞ্চিত পাঠকের মনে অলিখিতভাবে এই ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হয় যে বিজ্ঞানের মূলনীতিগুলাে শিখতে তথ্যপ্রযুক্তি লাগবেই লাগবে আর তার যেহেতু এই সুযােগ নেই সেহেতু তার পক্ষে বিজ্ঞান শেখা খুব কঠিন একটা ব্যাপার। আর যে পাঠকের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা আছে তার হয়তাে বইটি পড়তে গিয়ে হাত নােংরা' করার দরকারই পড়বে না। কয়েকটা ক্লিক করেই সব প্রােগ্রাম চালিয়ে ফেলবে! অথচ বিজ্ঞানের একেবারে মৌলিক জিনিসগুলাে হাতেকলমে শিখতে হলে হাত নােংরা করার বিকল্প নেই।
১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি রাজশাহীতে জন্ম বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ও লেখক সৌমিত্র চক্রবর্তীর। কাঞ্চননগর মডেল হাই স্কুল থেকে প্রাইমারি এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বই পড়ার নেশা ছোটবেলা থেকেই, আর এ বিষয়ে সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে গেছেন তার বাবা-মা। তবে ক্যাডেট কলেজে পড়াকালে কলেজের লাইব্রেরিতে থাকা অনেক বিরল বইয়ের খোঁজ পেয়েছিলেন। সেসব বইয়ের মাঝে তাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতো গণিতের বই। ফলে গণিতের প্রতি আগ্রহটা তার সহজাত, কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি জীববিজ্ঞানকেও আপন করে নিয়েছিলেন। অপরদিকে ঝিনাইদহ সরকারি স্বাস্থ্য সহকারী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ বাবা এবং ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মায়ের অনুপ্রেরণাও তাকে প্রভাবিত করেছে। তাই চিকিৎসক হওয়ার আশায় তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু গণিত এবং জীববিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। সৌমিত্র চক্রবর্তীর বই লেখার ধাঁচ অনেকটা গবেষণাধর্মী, এছাড়াও বাংলায় সহজভাবে তিনি গণিত এবং বিজ্ঞানের গুরুগম্ভীর বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে থাকেন যাতে করে সাধারণ পাঠকের কাছে বিষয়গুলো সহজ হয়ে দাঁড়ায়। সৌমিত্র চক্রবর্তী এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘প্রাণের মাঝে গণিত বাজে’, ‘জীবনের গল্প’, ‘জীবনের গাণিতিক রহস্যঃ পপুলেশন জেনেটিক্স ও গেইম থিওরি’, ‘গণিতের সাথে বসবাস’, ‘খণ্ড ক্যানভাস’ ইত্যাদি। বই লেখার পাশাপাশি তিনি আরো কিছু কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এবং ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুলের উদ্যোক্তা। তাঁর সময় কাটে অবসরে বই পড়ে ও প্রোগ্রামিং চর্চা করে। ২০২১ সালে "করোনা বৃত্তান্ত" বইয়ের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃক "হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান লেখক পুরস্কার" -এ ভূষিত হয়েছেন।