আল কুরআন এক মহাবিস্ময়br উপমার শৈল্পিকতায় মুগ্ধময় কুরআনbr শিকড়ের সন্ধানেbrbr Bআল কুরআন এক মহাবিস্ময় /bbr ভূমিকাbr আল কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান : ডঃ মরিস বুকাইলিbr আল কুরআনে ভ্রণতত্ত্ব : ডঃ কিথ এল. মূল br আল কুরআন - এক মহাবিস্ময় : গ্যারি মিলারbr পরিশিষ্ট : খোন্দকার রোকনুজ্জামানbr বিস্ময়ের সেকালbr বিস্ময়ের একালbr B উপমার শৈল্পিকতায় মুগ্ধময় কুরআন /bbr আল-কুর’আনের প্রজ্ঞাময় পবিত্র জীবনব্যবস্থার সাথে তার সাহিত্য-শৈলীও যে মু’জিযার অন্তর্ভুক্ত সে-কথা কতোজনই-বা জানে! বাংলাভাষায় আলঙ্কারিক কুর’আনের সাহিত্যশৈলীর উপর কাজ নেই বললেই চলে। অথচ এর উপলব্ধি কুর’আনের সাহিত্যমান, চ্যালেঞ্জ ও এর মূল্যায়ন বুঝতে বেশ জরুরী। সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র্যভাবে বিস্তৃত পরিসরে এর রচনা শুরু করেন তাঁর তাফসিরের অনন্য ভূমিকাগ্রন্থ “আল-কুর’আনের শৈল্পিক সৌন্দর্য” বইতে। কুতুব শহী (রাহিমাহুল্লাহ) এর বইটি বড় সূচনা; এর সাথে আরো অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে যা আমাদের সামনে আসেনি। আমরা এখানে উপমা, রূপক ও বাগধারার ক্ষেত্রে আরো বিস্তৃতভাবে জানার চেষ্টা করবো ইন শাআ আল্লাহ। br কুর’আনে রয়েছে বর্ণনার বিভিন্ন ঢঙ এবং আলংকারিক বিভিন্ন মাত্রাসহ উচ্চমাত্রিক সাহিত্য-অলঙ্কারের সমাবেশ। কুর’আন নাযিলের পর মুশরিকরা কেন একে পরাজিত করতে সেসময়কার সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষিত কবি-সাহিত্যিকদের পাঠাতো? তারাই-বা কেন বলতো “এ কুর’আন মানুষের পক্ষে রচনা করা অসম্ভব”, অথচ এ তো তাদেরই ভাষায় নাযিলকৃত! ফলে, তখনকার কাফির-মুশরিকরা কুর’আনের অনন্যতা ও অলঙ্কার বুঝতে পেরে যেভাবে নুইয়ে পড়তো, আজ আমরা মুসলিমরাও সেই অনন্য শক্তি ও শৈলী থেকে দূরে, বিস্মৃত। অথচ এর সৌন্দর্য, শৈলী, ঢঙ্গ, চ্যালেঞ্জ ও মূল্যায়ন আমাদেরকে কুর’আনের অমূল্যতা বুঝতে ও এর প্রতি ভালোবাসার তীব্রতা জাগাতে অনন্য ভূমিকা পালন করে।br কুর’আনের অলঙ্কারের এই উপমা-বাগধারার অভ্রভেদী বয়ান ও সেই বর্ণনায় বর্ণিত অনন্য শৈলীর হেদায়াত সরলভাবে বর্ণিত হয়েছে উস্তাদ নোমান আলী খানের সংকলন গ্রন্থ “উপমার শৈল্পিকতায় মুগ্ধময় কুর’আন” বইটিতে। এসব উপমা মুমিনদের প্রাণে দেয় দৃঢ়তা আর অলঙ্কারের নিশ্ছেদ্র শক্তি অবিশ্বাসীদের অন্ধ বিশ্বাসকে করে ভঙ্গুর।br B শিকড়ের সন্ধানে /bbr একটা ভাষা কিছুই না বুঝে তিলাওয়াত করছি ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই অযৌক্তিক লাগত। কিন্তু যতবার অর্থসহ পড়তে গেছি, প্রতিবারই একদম শুরুতে গিয়েই আটকে গেছি। সূরা বাক্বারার পুরোটা জুড়ে মুসা আলাইহিস সালামের কাহিনী বলা হচ্ছে, কোথা থেকে শুরু হয়েছে, কীসের পরে কী হলো কিছুই বুঝতাম না। তাই উৎসাহ ধরে রাখতে পারতাম না।br তখন যেটা আমি বুঝি নি তা হল কুরআনের বর্ণনা পদ্ধতিটা আসলে কথোপকথনের ভঙ্গীর মতো। এটা কোনো ইতিহাস গ্রন্থ নয়, তাই কাহিনীগুলো ধারাবাহিকভাবে বলা হয় নি। অন্য কোনো উৎস থেকে কাহিনীগুলোর ক্রম না জানলে অনুবাদ পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা প্রবল, যেটা আমার হত। br এই বইয়ে তাই আমরা কুরআনে বর্ণিত বনী ইসরাইলের কাহিনী ধারাবাহিকভাবে জানার চেষ্টা করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি কিভাবে আমরা এক উম্মাহ থেকে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিম- এই তিনটা ভাগে ভাগ হয়ে গেলাম। br এই বইটা তাই ‘শিকড়ের সন্ধানে’ লিপ্ত হওয়ার একটা বিনম্র প্রচেষ্টা; আমরা কেন মুসলিম, ইহুদি বা খ্রিস্টানদের সাথে আমাদের বিশ্বাস ও আচারের পার্থক্যটা কোথায়, সেটা আবিষ্কারের একটা যাত্রা। এটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুরআনের ঘটনাগুলোর একটা নির্মোহ বিশ্লেষণ। নিজের অজান্তেই আমরাও কি ধারণ করে চলেছি সেই একই বৈশিষ্ট্যসমূহ, যার জন্যই আল্লাহ পূর্ববর্তীদের তিরষ্কার করেছেন? আমরা কি তাদের অন্তর্ভুক্ত, কিয়ামতের দিন তাদের যাদের ব্যাপারে অভিযোগ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন- হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে পরিত্যাগ করেছে। (সূরা ফুরক্বান, আয়াত : ৩০)
ড. মরিস বুকাইলি ১৯২০ সালের ১৯ জুলাই ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। ফ্রেঞ্চ সোসাইটি অব ইজিপ্টোলজির (মিশরত্ত্ব) সদস্য এই চিকিৎসক একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞও ছিলেন। বিশ্বজুড়ে তিনি একজন প্রসিদ্ধ চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি সৌদি বাদশা ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজের পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন ১৯৭৩ সালে। মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও ড. বুকাইলির কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। তিনি মেডিসিন চর্চা করেছেন ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। তবে তাঁর কর্মজীবন শুধু চিকিৎসা জগতেই সীমাবদ্ধ নয়, নাম কুড়িয়েছেন একজন প্রসিদ্ধ গবেষক হিসেবেও। মরিস বুকাইলি ধর্ম ও বিজ্ঞানের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কের একজন একনিষ্ঠ গবেষক ছিলেন। তাঁর গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম, বিশেষত ইসলাম এবং আধুনিক বিজ্ঞানের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কগুলোর বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ। এই গবেষণা চলাকালে তিনি বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক মতবাদ ও পদ্ধতির সাথে কোরআনে উল্লেখিত বক্তব্যের সাদৃশ্য দেখতে পান। অতঃপর প্রকাশিত হয় মরিস বুকাইলির বই ‘বাইবেল, কুরআন এন্ড সায়েন্স’। এই বইয়ে তিনি দেখান যে, কোরআন একটি ঐশ্বরিক গ্রন্থ, যাতে বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক তথ্য রয়েছে। এই মতবাদ থেকে জন্ম নেয় ‘বুকাইলিজম’ বা বুকাইলিবাদ। ড. মরিস বুকাইলি এর বই সমগ্র বিশ্বব্যাপী সাধারণ পাঠক ও গবেষকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত ‘বাইবেল, কুরআন এন্ড সায়েন্স’ বিশ্বের প্রায় ১৭টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আরো প্রকাশিত ড. মরিস বুকাইলি এর বই সমূহ হলো ‘দ্য কুরআন এন্ড মডার্ন সায়েন্স’, ‘হোয়াট ইজ দ্য অরিজিন অব ম্যান’, ‘মাম্মিজ এন্ড ফারাওজ: মডার্ন মেডিকেল ইনভেস্টিগেশনস’ ইত্যাদি। মরিস বুকাইলির রচিত বইগুলোর বেশিরভাগই ফরাসি ভাষায় লেখা, তবে ইংরেজিতেও তাঁর রচনা আছে। প্রখ্যাত এই লেখক, গবেষক ও চিকিৎসক ১৯৯৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পরলোকগমন করেন।