তোয়াহা সাহেবের এই স্মৃতিকথা একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। - বদরুদ্দীন উমর সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ তোয়াহা ১৯২২ সালের ২ জানুয়ারি ল²ীপুর জেলার রামগতি থানার হাজিরহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হাজী মোহাম্মদ ইয়াসীন এবং মাতা হাসনা বানু। ১৯৩৯ সালে ফরাশগঞ্জ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৫০ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হলের ভিপি নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৪৬ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সিলেট গণভোটে কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি এদেশে প্রথম সমাজতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ বছরই তিনি সমাজতন্ত্রের সর্বোচ্চ ক্যাডার ‘কমরেড’ পদে উন্নীত হন। ১৯৪৯ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৫০ সালে ‘গণতান্ত্রিক যুবলীগ’ ও ‘গণনাট্য সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী এবং অন্যতম ছাত্রনেতা। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তিনি পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে শ্রমিক সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মজদুর ফেডারেশন গঠন করেন এবং এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন এবং পরে ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে আইউব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারী হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। রাজনৈতিক কারণে ১৯৪৮, ১৯৫২ ও ১৯৫৪ সালে কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৯ সালের আইউব বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তিনি অন্যতম সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। ন্যাপের পক্ষে জনগণের শোষণমুক্তির সংগ্রাম আর সম্ভব নয় একথা বলে তিনি জুন মাসে (১৯৭০) ন্যাপের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭০ সালে শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে ‘সাম্যবাদ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নকশাল বাহিনী গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের নিয়ে নিজস্ব মুক্তিবাহিনী গঠন করেন এবং নোয়াখালী জেলার সদর পশ্চিমাঞ্চলে একটি মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলেন। ল²ীপুর ও রামগতি অঞ্চলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধে একসঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতার পর তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হলে তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৭৬ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের পর তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনেও তিনি আট দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। তিনি বাংলাদেশ-চীন ও বাংলাদেশ-উত্তর কোরিয়া মৈত্রী সমিতির সভাপতি ছিলেন। রাজনীতি ও সমাজনীতি সম্পর্কে তাঁর রচিত কিছু সংখ্যক প্রবন্ধ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর হাজিরহাটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উৎস: বাংলা পিডিয়া এবং অন্যান্য।