অতীত নিয়ে স্বাভাবিক জিজ্ঞাসার বাইরে একটা ব্যবহারিক দিকও থাকে: আমরা এখন যে রকম তেমনটা হওয়ার পিছনে আমাদের অতীতের ভূমিকাটাও জানতে চাই, যাতে ভবিষ্যৎ পথরেখাটা আমরা নির্ণয় করতে পারি। কিন্তু কী ভাবে জানা যাবে সেই অতীতকে? অগণন পদচিহ্নের তলায় চাপা পড়া ছাপগুলো খুঁজে বার করা সহজ নয়, তার জন্য দরকার নানান সংকেতগুলোকে নিবিড় ধৈর্যশীল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে, তাদের প্রাসঙ্গিকতা ও ব্যবহারযোগ্যতা যাচাই করা। শুধু পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও জ্ঞানতৃষ্ণা দিয়েই এ কাজ হয় না। এর জন্য দরকার এমন এক প্রজ্ঞা-র, যা গড়ে ওঠে সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্মবোধ থেকে। সুকুমারী ভট্টাচার্য সেই প্রজ্ঞার অধিকারী, যার আলোকে তিনি সামনে মেলে ধরেন আমাদের অতীতকে। মূলত বিপুল সংস্কৃত সাহিত্য-সম্ভারে ছড়িয়ে থাকা সংকেতগুলোকে স্পষ্ট করে তিনি দেখান কেমন ছিল আমাদের সেই তথাকথিত ‘বৈদিক স্বর্ণযুগ'। তাঁর অনুসন্ধানে উঠে আসে, নারী, শূদ্র ও অন্যান্য শ্রমজীবীর মনুষ্যেতর সামাজিক অবস্থান; উচ্চবর্গ পুরুষের একাধিপত্য ; বর্গবিভাজনের ভয়াবহতা। তিনি তুলে ধরেন সেই সমাজের নানা দ্বন্দ্ব: এক দিকে জ্ঞানচর্চার গভীর অনুশীলন, নানান দার্শনিক তার্কিকতার উদ্ভব ও প্রচলন, চিন্তার সুউচ্চ বিকাশ; আর অন্য দিকে নিম্নবর্গের লোকেদের অক্ষরের অধিকারটুকুও না-থাকা। বর্তমান সংকলনে আছে লেখিকার তিনটি বই— 'প্রাচীন ভারত', 'প্রাচীন ভারতে নারী’ এবং ‘প্রাচীন ভারত: সমাজ ও সাহিত্য'। বিশুদ্ধ জ্ঞানানুশীলন এবং বর্তমানকে ইতিবাচক পথে পরিবর্তন— এই দুই দিক থেকেই সুকুমারী ভট্টাচার্যর প্রবন্ধগুলি অবশ্যপাঠ্য।