২৯ মে ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণকারী মহসিন মখমলবাফ ইরানের প্রথম সিনেমা পরিচালক, যিনি পূর্ববর্তী প্রজন্মের সঙ্গে কোনরূপ সংযোগ ছাড়াই সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন। তিনি একাধারে গল্প লেখক, নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার, সমালোচক, শিল্প-সাহিত্য শিক্ষাদানকারী ও ইসলামি-বিপ্লবের অন্যতম কুশলী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি নতুন যুগের অসংখ্য নতুন পরিচালককে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছেন। তাঁর প্রথম সিনেমা তোওবে নোছুহ (ঞড়নবয ঘড়ংঁয, ১৯৮৩ খ্রি.) দর্শকদের মাঝে এক ধরনের নতুন আবেগ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। যদিও টেকনিক্যাল দিক থেকে যথেষ্ট দুর্বল ছিল; তবে এই সিনেমাটির গুরুত্ব অন্য জায়গায়। এ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ইরানের সিনেমা প্রথমবারের মতো মসজিদে গমন করে। এর শুটিং হয় মসজিদে এবং সিনেমায় সরাসরি মসজিদের ভেতরের দৃশ্য দেখানো হয়। ফলে দর্শকরা ইসলামি বিপ্লবপরবর্তী অন্য সব চলচ্চিত্র থেকে বেশি আগ্রহ নিয়ে এটি উপভোগ করেন। এমনকি সিনেমাটির প্রদর্শনী গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। তাঁর প্রথম দিকের সিনেমাগুলোতে ধর্মীয় মতবাদকেন্দ্রিক বইগুলো থেকে সিনেমা নির্মাণের প্রবণতা দেখা যায়। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র এস্তে আযেহ (ঋববষরহম ভৎড়স ঊারষ ঃড় এড়ফ, ১৯৮৪ খ্রি.) ও পরবর্তী চলচ্চিত্র দো চেশ্মে বিছু (ঞড়ি ইষরহফ ঊুবং, ১৯৮৩ খ্রি.) এ ঘরানার ছিল। নতুন ঘরানার পরিচালক হিসেবে মহসিন মখমলবাফের নাম সর্বপ্রথম উল্লেখ করতে হবে। যিনি নতুন প্রজন্মের ধারক-বাহক হিসেবে ইরানের সিনেমার জগতে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী পরিচালক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
ড. মুমিত আল রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য তিনি ফারসি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন- 'ইউসুফ-জুলেখা', 'বিবি মরিয়ম', 'ইসা নবি', 'আসহাবে-কাহাফ', 'কারবালা কাহিনী' ও 'শেহেরজাদ ফরহাদ'। এছাড়া প্রায় ৪০টি ইরানি সিনেমা বাংলায় অনুবাদ করেছেন; দেশ-বিদেশে প্রকাশিত মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ১৮টি। ২০১৮ সালে তার হাত ধরেই এদেশে প্রথম ইরানি সিনেমার শ্যুটিং শুরু হয়। এ সময় ইরানের বিখ্যাত নারী পরিচালক নার্গিস অবিয়ার তাঁর চলচ্চিত্র 'শাবি কে মহ কমেল শোদ'-এর ২২ জন কলাকুশলী নিয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন। এছাড়া 'দিন দ্য ডে' চলচ্চিত্রে ইরানি অংশের উপদেষ্টা এবং জয়া আহসান অভিনীত ইরানি সিনেমা 'ফেরেশতে'-র চিত্র নাট্যকার ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে লেখকের ফারসি থেকে বাংলায় অনূদিত 'শারমে বুদা' প্রামাণ্যচিত্রটি মধ্যপ্রাচ্যের কান খ্যাত আন্তর্জাতিক ফজর চলচ্চিত্র উৎসবের ৩৬তম আসরে তেহরানের চরছু কমপ্লেক্সের ভাহদাত হলে প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি রোহিঙ্গাদের নিয়ে নির্মিত। দীর্ঘ দিন ইরানে অবস্থানের ফলে লেখক ইরানি জনগণের লোকজ সংস্কৃতি, উৎসব, রীতিনীতি ক্ষেত্রসমীক্ষার দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছেন। মূল ফারসি গ্রন্থের ভিত্তিতে ইরান ও ইরানের চলচ্চিত্র নিয়ে বেশকিছু বই প্রকাশিত হয়েছে এবং কয়েকটি মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ অচিরেই প্রকাশিত হবে।