দেশকাল ছাপিয়ে ইরানের সিনেমা এখন বৈশ্বিক পরিসরে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে পরিগণিত। জীবনঘনিষ্ঠ বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি সিনেমাই যেন সমগ্র বিশ্বের কথা বলে। নতুন করে ভাবতে শেখায়, কল্পনার জগতকে নতুন করে উন্মোচন করে। সিনেমার জগতকে শুধুই বিনোদন আর নাচ-গানের বাইরে রেখেও যে অব্যক্ত কথা বলা যায়; দুঃখ-বেদনা, আশা-নিরাশা, বিষণœতা-নির্জনতা, প্রেম-ভালোবাসার অনুচ্চারিত শব্দগুলো দর্শকদের সামনে মেলে ধরা যায়, তার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে বিশ্বখ্যাত ইরানি পরিচালক দারিয়ুশ মেহেরজুই, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, মহসিন মখমলবাফ, মাজিদ মাজিদি, আসগর ফারহাদি, বাহমান কোবাদি’র চলচ্চিত্র। নতুন যুগের ও নতুন ঘরানার পরিচালকগণও পিছিয়ে নেই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও ইরানি চলচ্চিত্রকে নতুনত্ব দান করছেন। হরেকরকম বিষয়বস্তুর সমাহার ঘটিয়েছেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশে ইরানি সিনেমা প্রচার ও প্রসারের দুই যুগের বেশি সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে। রঙিন দুনিয়ার প্রদর্শনী আর প্রচার ছাড়িয়ে স্থান করে নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে। বন্ধুবর প্রিয় কবি পিয়াস মজিদ প্রথম আমার অনুবাদকর্মগুলো বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা করেছেন। তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। প্রতিটি অনুবাদ অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বিন্যাসে সহযোগিতা করায় প্রথম আলোর ফিচার লেখক স্নেহাস্পদ কবীর হোসাইন-কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ইরানি চলচ্চিত্রগুলো গবেষক ও চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মাঝে নতুন করে তুলে ধরতে চলচ্চিত্রের সংলাপ ও পরিচালকদের ছোট্ট একটি পরিচিতি তুলে ধরার প্রয়াস হচ্ছে এ বই।
ড. মুমিত আল রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য তিনি ফারসি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন- 'ইউসুফ-জুলেখা', 'বিবি মরিয়ম', 'ইসা নবি', 'আসহাবে-কাহাফ', 'কারবালা কাহিনী' ও 'শেহেরজাদ ফরহাদ'। এছাড়া প্রায় ৪০টি ইরানি সিনেমা বাংলায় অনুবাদ করেছেন; দেশ-বিদেশে প্রকাশিত মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ১৮টি। ২০১৮ সালে তার হাত ধরেই এদেশে প্রথম ইরানি সিনেমার শ্যুটিং শুরু হয়। এ সময় ইরানের বিখ্যাত নারী পরিচালক নার্গিস অবিয়ার তাঁর চলচ্চিত্র 'শাবি কে মহ কমেল শোদ'-এর ২২ জন কলাকুশলী নিয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন। এছাড়া 'দিন দ্য ডে' চলচ্চিত্রে ইরানি অংশের উপদেষ্টা এবং জয়া আহসান অভিনীত ইরানি সিনেমা 'ফেরেশতে'-র চিত্র নাট্যকার ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে লেখকের ফারসি থেকে বাংলায় অনূদিত 'শারমে বুদা' প্রামাণ্যচিত্রটি মধ্যপ্রাচ্যের কান খ্যাত আন্তর্জাতিক ফজর চলচ্চিত্র উৎসবের ৩৬তম আসরে তেহরানের চরছু কমপ্লেক্সের ভাহদাত হলে প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি রোহিঙ্গাদের নিয়ে নির্মিত। দীর্ঘ দিন ইরানে অবস্থানের ফলে লেখক ইরানি জনগণের লোকজ সংস্কৃতি, উৎসব, রীতিনীতি ক্ষেত্রসমীক্ষার দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছেন। মূল ফারসি গ্রন্থের ভিত্তিতে ইরান ও ইরানের চলচ্চিত্র নিয়ে বেশকিছু বই প্রকাশিত হয়েছে এবং কয়েকটি মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ অচিরেই প্রকাশিত হবে।