"এ শর্ট হিস্ট্রি অব দি স্যারাসিন্স: আরব জাতির ইতিহাস" বইয়ের ফ্ল্যাপের অংশ থেকে নেয়া: সৈয়দ আমীর আলী ছিলেন মিশরের ইমাম আলী-উর-রেজার বংশধর। চাকরি করেছেন ইংরেজদের সঙ্গে ভারতে। ফলে তার মন-মানসিকতা গড়ে ওঠেছিল আরবপারস্য-ভারতীয় ও ইউরােপীয়দের সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণে । মুসলমানদের নিকট ইসলামের গৌরবময় ঐতিহ্য তুলে ধরার প্রয়াসেই তিনি ‘A Short History of the Saracens' গ্রন্থ রচনা করেন। বস্তুত তার নিজের দমনীতেও এ ঐতিহ্যের শাণিত ধারা প্রবাহমান ছিল। আমরা জানি ইসলামের ইতিহাস রচয়িতার বেশির ভাগই খ্রিস্টান। ফলে তারা সম্পূর্ণভাবে ইসলামের ইতিহাস রচনায় ব্যর্থ হন। তাদের সমালােচনা অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট হয়। এই জন্য ইসলামের ইতিহাস পরিপূর্ণরূপে রচনার জন্য তার এ প্রয়াশ। লেখক শিয়াপন্থি বলে হজরত উসমান (রা.) ও উমাইয়াদের প্রতি তার কিঞ্চিৎ বিরােধ মনােভাব এবং হজরত আলী (রা.) ও তার বংশধরদের প্রতি তার দুর্বলতা লক্ষ করা যায়। এছাড়া তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে সকল ঘটনার বিশ্লেষণ করেছেন। কাজেই গ্রন্থটিতে যে তিনি নিরপেক্ষভাবে ঘটনার উল্লেখ ও ব্যাখ্যা করেছেন তা নিঃসংশয়ে বলা যায়।
Title
এ শর্ট হিস্ট্রি অব দি স্যারাসিন্স: আরব জাতির ইতিহাস
জাস্টিস স্যার সৈয়দ আমীর আলীর জন্ম ১৮৪৯ সালের ৬ এপ্রিল, হুগলি জেলার চুড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা সৈয়দ সাদত আলীর পূর্বপুরুষরা ইরান থেকে এদেশে এসেছিলেন। তাঁর বংশের অনেকেই ছিলেন পারস্য, দিল্লি ও অযােধ্যা রাজদরবারের বিশিষ্ট প্রতিনিধি।। তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে এম. এ. ও আইন পাস করেই আমীর আলী কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ লাভ। করেন। কিছুকাল পরই চাকরি ছেড়ে স্বাধীনভাবে আইন ব্যবসা শুরু। এরপর ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৮৭৩ সালে বিলেতের ইনার টেম্পল থেকে। কতিতের সাথে ব্যারিস্টারি পাস। ওই বছরই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন এবং হাইকোর্টে আইন-ব্যবসার সূত্রপাত। ১৮৭৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলাে নির্বাচিত হয়। পরের বছর হন প্রেসিডেন্সি কলেজের আইনের অধ্যাপক। ১৮৮১ সালে তোকে টেগাের ল’ প্রফেসর নিযুক্ত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার তাকে প্রাদেশিক আইন সভার সদস্যও মনােনীত করেন। তিনি যােগ্যতার সাথেই সে দায়িত্ব পালন করেন ১৮৮৩ সাল পর্যন্ত। ১৮৯০ সালে তিনি নির্বাচিত হন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। পরে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ অলংকত করেন। সুদীর্ঘ চৌদ্দ বছর সে দায়িত্ব পালনের পর ১৯০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। স্যর সৈয়দ আমীর আলী বিয়ে করেছিলেন এক সম্ভ্রান্ত ইংরেজ পরিবারে। তাই তার অবসর জীবন বিলেতেই কাটে। ১৯০৯ সালে তাঁকে বিলেতের প্রিভি কাউন্সিলের বিচারপতি নিযুক্ত করা হয়। তার আগে কোন ভারতীয় এই কিংস কাউন্সিলে প্রবেশ করতে পারেননি। জাস্টিস আমীর আলীর চেয়ে লেখক আমীর আলীর স্থান অনেক উচ্চে। তিনি ইসলাম সম্পর্কে ও আইন-বিষয়ক বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তার মধ্যে কয়েকটির নাম দেওয়া হল : ১। দ্য স্পিরিট অব ইসলাম। ২। হিষ্ট্রী। অব স্যারাসেন। ৩। এথিকস অব ইসলাম। ৪। মহামেডান ল ইত্যাদি। | সৈয়দ আমীর আলীর গুণবত্তায় মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে সি, আই ই. খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেন। ১৯২৮ সালে এই প্রতিভাবান পুরুষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিলেতের বাড়িতে।