তবে কি সংগীতের সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসের বিরোধ চলবেই? প্রচণ্ড তত্ত্ব তালাশ, বহুবিভাজিত মতামত, বিধি নিষেধের ঘেরাটোপে অনেকে বিশ্বাসে পদাঘাত করে গড্ডলিকায় ভেসে যাচ্ছেন। অনেকে আবার বিভাজন আর বহুমতের মধ্যে খুঁজছেন ঐক্য ও ইতিবাচকতা। সোজা কথা সোজা ভাবেই যদি বলি, তাহলে নিষিদ্ধ গান সেটাই, যে গান মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আর বিশুদ্ধ বাদ্য সেটাই, যে বাদ্য মনের মধ্যে বিভ্রান্তির পরিবর্তে এক পরম শীতলতা তৈরি করে। কিন্তু এরকম বাদ্য কি আদতে আছে? সেখানেই বড় প্রশ্নের আনাগোনা! ঘুড়ি উড়ানোর বয়স থেকেই গানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। চোখের সামনে ঘটে গেছে, ঘটে যাচ্ছে কত ঘটনা। সেইসবের কিছুটা প্রকাশ করা যায়, অনেকটা করা যায় না। সংগীত জগতের আনাচে কানাচে পরিভ্রমণকারী একজন মানুষ হিসেবে আমি হতে চেয়েছি কাঁদাখোচা পাখি। ভেতরের গভীর থেকে তুলে আনতে চেয়েছি সংকট ও সম্ভাবনা। সেই প্রচেষ্টা করতে গিয়ে কখনো আবেগে ভেসেছি, কখনও নির্মম বাস্তবতা এসেছে আর কখনও এসেছে চরম সত্য কথন। মিউজিক হালাল না হারাম? এই অমীমাংসিত প্রশ্নের দ্বন্দ্ব নিরসন করার মতো আমি কোনো রথি মহারথি নই। কিন্তু শিল্পের যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রশ্ন উত্থাপন, সেটি সম্ভবত সফলভাবে করতে পেরেছি এখানে। আমি তো ফেরেশতা নই যে, আমার ভুল হবে না। হ্যাঁ আমার চিন্তার মধ্যেও বিচ্যুতি থাকতে পারে, কিন্তু একটা চিন্তা যে উপস্থাপন করতে পেরেছি, তা হলফ করে বলতে পারি। সেই চিন্তার সুতো ধরে চলুন আরও অগ্রসর হই। জানি বুঝি ভাবি, এরপর কলম তুলে নেই। প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে কেউ কখনো বড় হয় না, বরং চিন্তার মধ্যে সংযোজন বিয়োজন করেই নতুন পথ তৈরি করতে হয়। বাংলা সংগীতেও সোনাদিন আসুক। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বাসী মানুষের হৃদয় জুড়ে শীতলতা তৈরি করুক। সংখ্যালগিষ্ঠের প্রতি দরদ তৈরি করুক। কোনো বোধহীন আবেগ আমাদেরকে চিন্তার দরজাকে রুদ্ধ করে না দিক
কোনো রকম রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত অারোপিত পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই, শুধুমাত্র নিরন্তর পরিশ্রমের কারণে স্বার্থান্ধ রাজধানীতে টিকে গেছেন অামিরুল মোমেনীন মানিক ৷ তাঁর কোনো পলিটিক্যাল উইশ নেই ৷ অাছে সোশাল কমিটমেন্ট ৷ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের অাদর্শকে তিনি সবসময় সামনে রাখেন ৷ মানিক, সাংবাদিকতা-সঙ্গীত-সাহিত্যের মধ্য দিয়ে মূল্যবোধসম্পন্ন ও যুক্তিনির্ভর মানব সমাজের স্বপ্ন দেখেন ৷ গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে তাঁর ইউনিক দিক হচ্ছে-এক সাথে তিনি মেঠো রিপোর্টিং, জীবনবাদী গান, টক-শো সঞ্চালনা, খবরপাঠ ও গদ্য লেখেন ৷ দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অামিরুল মোমেনীন মানিককে অাখ্যা দোয়া হয় হয় 'শুদ্ধ উচ্চারণের সংবাদকর্মী' হিসেবে ৷ টিভি সাংবাদিকতায় মানিকের হাতেখড়ি ভারতের এনডিটিভির নির্বাহী প্রযোজক অভিজিৎ দাশুগুপ্তের কাছে ৷ গানের ক্ষেত্রে তিনি ক্ষুদ্র হলেও অালাদা ধারা তৈরী করেছেন ৷ মানিক এর নাম দিয়েছেন-মানুষমুখী গান ৷ অবশ্য প্রচলিত গণমাধ্যম তাঁকে বলে 'ব্যতিক্রমী গানের শিল্পী'৷ অবাক শহরে ও অায় ভোর তাঁর বিপুল অালোচিত এ্যালবাম ৷ ছোটবেলায় কবিতার নামে ছাইপাশ লিখতেন ৷ এখন সচেতনভাবে এটা এড়িয়ে চলেন ৷ সোজাসাপ্টা গদ্য লেখেন ৷ সমাজের অসঙ্গতি চোখে অাঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন ৷ তাঁর লেখা 'বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় স্টুপিড শিক্ষক' ছিলো বইমেলায় তরুণদের মধ্যে দ্বিতীয় সবোর্চ বিক্রিত বই ৷ কিংবদন্তি নচিকেতার সঙ্গে তাঁর ভিডিও গানের কৃতিত্ব এপার বাংলা ওপার বাংলায় প্রথম ৷ ২০১৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারীতে টিভি সাংবাদিকতায় মানিকের ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৷ এর অাগে স্কুল সময়ের ৫, কলেজ বেলার ২, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫, পেশাগত জীবনের ১০; টোটাল ২২ বছরের লড়াই ৷ অামিরুল মোমেনীন মানিক সাংবাদিকতায় পেয়েছেন সম্মানজনক পুরস্কার 'ইউনেস্কো ক্লাব জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড '৷ শুধুমাত্র অন্তহীন কর্মতৎপরতার কারণে তাঁর কিছু শত্রুও তৈরী হয়েছে ৷ মানিক এদের নাম দিয়েছেন- বেকুব নপুংসক ৷ তবে শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তাঁর কাজের মূল প্রেরণা ৷ পেয়েছেন উদীচী ইতিাস প্রতিযোগিতা পুরস্কার, রিপোর্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা, সাঁকো এ্যাওয়ার্ড, মৃত্তিকা পদকসহ বেশ কিছু পুরস্কার ৷ প্রফেশনালিজ ও প্র্যাগমাটিজম, তাঁর সারাজীবনের ধ্যান ৷ ২০১৬ সালে অামিরুল মোমেনীন মানিকের মূল শ্লোগান- বাঁচো এবঙ বাঁচাও ৷