■ ‘তোত্তোচান’ ১৯৮১ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। তার আগে এটি ধারাবাহিকভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল। পরবর্তীতে বইটির অনুবাদ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তোত্তোচান আমাদের দুই বাংলায়ও অনূদিত হয়েছে। বইটি পৃথিবীর সকল দেশের পাঠকের চিন্তাজগতে দাগ কেটেছে। কারণ- এই বই আমাদের দেখিয়ে দেয় শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কত সুন্দর সব চিন্তাভাবনা করা সম্ভব, যেমন করতেন প্রধান শিক্ষক সোশাকু কোবায়াশি। লেখক আমাদের জানিয়েছেন, কোবাইয়াশি মশাই খুব তেতো একটি কথা বলতেন শিশুরা জন্মায় খুব ভালো মানুষ হিসেবে, কিন্তু বড়দের কুপ্রভাব তাদের স্বভাব বদলে দেয়, তাই শিশুদের সম্পূর্ণ স্বাধীন মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে দেওয়াই মানবিক শিক্ষাব্যবস্থার মূল। ■ শিশুর প্রতি মনোযোগী ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন শিক্ষক আমাদের সমাজব্যবস্থায় এ সময়ে নেই বললেই চলে। তবুও অন্ধকারে আলো জ্বালাতে হবে, শিক্ষা ক্ষেত্র সুন্দর-সাবলীল করে গড়ে তুলতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে বইটি নতুন চিন্তা ও স্বপ্নের খোরাক জোগাবে। যে স্বপ্নের বীজ বপন হয়েছিল, তাকে প্রতিফলিত করাটা জরুরি। বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষাকেন্দ্রিক না হয়ে হয়েছে নম্বরকেন্দ্রিক; যা থেকে বেরিয়ে আসতে এ রকম বইয়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সচেতন বাবা-মায়ের বইটি অবশ্যপাঠ্য বললেও হয়তো ভুল হবে না।
তেসুকো কুরােয়ানাগির জন্ম টোকিওতে, ১৯৩৩ সালে। তিনি টোকিও সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে অপেরা সঙ্গীত বিষয়ে লেখাপড়া করেন ও তালিম নেন। কিন্তু পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন একজন গুণী অভিনয়শিল্পী এবং রেডিও টেলিভিশনের অতি জনপ্রিয় উপস্থাপক। দর্শকদের ভােটে পরপর টানা পাঁচ বছর তিনি জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মনােনীত হন। খুব দ্রুতই তাঁর থলেতে জমা হতে থাকে সমানজনক নানা পুরস্কার। ১৯৭৫ সাল থেকে জাপানের ইতিহাসের প্রথম দৈনিক টকশাে উপস্থাপনা করতে শুরু করেন, যার নাম ছিল ‘তেৎসুকোর ঘর’। তার প্রায় সকল অনুষ্ঠানই দর্শক জনপ্রিয়তা পায়। জাপান ও পৃথিবীর কল্যাণ নিয়ে সত্যি সত্যি চিন্তা ও সাধ্যমতাে কাজ করেন। তিনি লেখক তেৎসুকো কুরােয়ানাগির জীবন ও কর্ম দেখে বােঝা যায় রেলগাড়ি ইশকুলের প্রধানশিক্ষক মশাই নিজ হাতে কত সুন্দর একটি গাছের চারা রােপণ করে গেছেন, যা এখন ফুলে ফুলে শােভিত।