"পাকিস্তান জাতীয় দল বাঙালি খেলোয়াড়" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ এক সময় অবিভক্ত পাকিস্তানের অংশ ছিল আজকের বাংলাদেশ। সে কারণে পাকিস্তানের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাস। বিশেষ করে ক্রীড়াঙ্গন মিলেছিল একই মােহনায়। যদিও তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ক্রীড়াঙ্গন ছিল অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও জমজমাট। ঢাকা ছিল দুই পাকিস্তানের ক্রীড়াঙ্গনের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে হতাে পাকিস্তানের অভিন্ন কাঠামাের মধ্যে। অর্থাৎ পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলতে হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি খেলােয়াড়দের সেটা মােটেও সহজ ও স্বাভাবিক ছিল না। জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতাে ক্রীড়াঙ্গনেও পরিলক্ষিত হয়েছে নিদারুণ বৈষম্য জাতীয় দলে। বাঙালিদের খুব একটা সুযােগ দেওয়া হতাে না। যে খেলাগুলােতে বাঙালিদের আধিপত্য ও যােগ্যতা ছিল, তাতেও ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা। এ কারণে অনেক কৃতী ও খ্যাতিমান খেলােয়াড়ের পক্ষে শুধু বাঙালি হওয়ার কারণে জাতীয় দলের হয়ে কখনােই খেলা হয়ে ওঠেনি। একবুক আক্ষেপ, ক্ষোভ আর বঞ্চনা নিয়ে ইতি টেনেছেন খেলােয়াড়ি জীবনের। পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খুব কম সংখ্যক বাঙালিই খেলতে পেরেছেন। যাঁরা খেলেছেন, তাঁরাও ছিলেন বাঙালিদের অহংকার ও গৌরব। বাঙালিদের সেই ইতিহাস আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যেতে বসা সেই ইতিহাসকে তুলে আনা হয়েছে ‘পাকিস্তান জাতীয় দলে বাঙালি খেলােয়াড়' গ্রন্থে। অনুসন্ধানী মন ও গভীর ভালােবাসা নিয়ে দুলাল মাহমুদ ইতিহাসের জীর্ণ পাতা ঘেটে ঘেঁকে এনেছেন বাঙালিদের সেই গৌরবগাথা। কাজটি যে সহজ ছিল না, সেটা পাঠকরা নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারবেন। বাঙালি খেলােয়াড়দের খুঁজে বের করার পাশাপাশি ফুটবল, সাঁতার, হকি, বাস্কেটবল, দাবা ও ক্রিকেটের মতাে খেলায় তদানীন্তন পূর্ব বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ও ভূমিকার তথ্যবহুল ইতিহাস উদঘাটন করা হয়েছে পরম নিষ্ঠায়। গবেষণামূলক এই গ্রন্থটি বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে অনন্য সংযােজন হয়ে থাকবে।