"লোক-উৎসব : নবান্ন" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে ধীরে ধীরে নবান্ন আজ পার্বণ থেকে উৎসবে পরিণত হয়েছে। ঢাকায় ‘জাতীয়ভাবে’ও উদ্যাপিত হয় নবান্ন। সূচনার বিচারে শ্রেয় হলো নবান্নকে পার্বণ বলা; আজকের বিচারে ‘নবান্ন-উৎসব’। তবে এটি ‘লোক-উৎসব’ই-যদিও শহরে ঘটা করে পালিত হচ্ছে নবান্ন। পালা আর পার্বণই বাঙালির খুশি ও সুখী থেকেছে। এই যে মাসে মাসে খুশির আয়োজন-সুখের প্রণোদনা তো এখানেই। নবান্ন ছিল এই সুখ-আয়োজনের সর্বাগ্রে। বাংলাদেশে নবান্ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ন ও অনুসন্ধানী লেখা হয়নি বললেই চলে। এদেশের সংস্কৃতি ও উৎসব নিয়ে রচিত গ্রন্থগুলো ভালোভাবে খুঁজে দেখলে এটা স্পষ্ট হবে, বেশিরভাগ লেখকই নবান্নকে তাঁদের আলোচনার বাইরে রেখেছেন। অনেকে আবার নবান্নের ওপর ‘নমঃ নমঃ’ করে আলোচনা সেরেছেন। নবান্নের ওপর একটি সামগ্রিক ধারণা পাবার প্রত্যয়ে পরিকল্পিত হয়েছে এই গ্রন্থে। প্রায় সোয়াশ বছর আগের লেখাও যেমন এখানে সংকলিত হয়েছে, তেমনি আছে নবীন লেখকের রচনা; বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার নবান্নের সাম্প্রতিক আয়োজন ও পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে এই সংকলনগ্রন্থে। মোটের ওপর সোয়াশ বছর আগে থেকে আজ অবধি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে নবান্ন আয়োজনের চিত্র ও চারিত্র্যটি এই গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।
ড. সৌমিত্র শেখর কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, ভাষাচিন্তক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত ড. শেখর সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্ত গবেষক হিসেবে অত্যন্ত তরুণ বয়সে পিএইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেছেন (১৯৯৭) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিদ্যাসাগর-অধ্যাপক ড. ক্ষেত্র গুপ্তের তত্ত্বাবধানে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তিনি ১৯৯৬ সালে যােগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, প্রভাষক পদে পরের বছর, পিএইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন হলে- প্রভাষক বৃদে যােগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। সাহিত্য-আলােচনায় তিনি প্রয়ােগ করেন একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। ব্যক্তির মন-জোগান লেখায় বিশ্বাস নেই তাঁর। গতানুগতিক আলােচনায় দীর্ঘ দীর্ঘ উদ্ধৃতি ব্যবহার করে প্রাতিস্বিক’, ‘অভূতপূর্ব’, ‘তুলনারহিত শব্দের যত্রতত্র যে ব্যবহার, সেগুলাে তাঁর সাহিত্যালােচনায় একেবারেই দেখা যায় না। তাঁর রচিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলি: গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ (১৯৯৫); নজরুল-কবিতার পাঠভেদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০১); বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (২০০৪); সিভিল সােসাইটি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০৪); ব্যাকরণ সন্ধান (২০০৬); কথাশিল্প অন্বেষণ (২০০৬); সত্যেন সেনের উপন্যাসে জীবন ও শিল্পের মিথস্ক্রিয়া (২০০৭); ষাটের কবিতা : ভালােবাসার শরবিদ্ধ কবিকুল (২০১০); ভাষার প্রাণ ভাষার বিতর্ক (২০১১); সরকারি কর্মকমিশন ও শিক্ষাভাবনা (২০১২); ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: চেতনার বাতিঘর (২০১৩); নজরুল: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি এবং শিল্পীর বােধ (২০১৩)। তাঁর বেশ কিছু সম্পাদিত-গ্রন্থও আছে। ড. শেখর বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ ভাষা-সমিতির জীবনসদস্য। গবেষণার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিস এওয়ার্ড (২০০১) ও ময়েনউদ্দিন ফাউন্ডেশন পদক (২০০৮) লাভ করেন।