আবু ইসহাকের দুটো উপন্যাসেরই-সূর্য- দীঘল বাড়ী ও পদ্মার পলিদ্বীপ-বিষয়বস্তু গ্রামের মানুষ, গ্রামীণ সমাজ ও জীবন। গল্পে তিনি কাজ করেছেন বিবিধ বিষয় নিয়ে। তাঁর তিনটি গল্পগ্রন্থভুক্ত ৫০টি গল্পের মধ্যে জোঁক এবং আবর্ত-মাত্র এই দুটো গল্পে তীব্রভাবে গ্রামীণ জীবন এসেছে। দাদির নদীদর্শন, শয়তানের ঝাড়ু, বোম্বাই হাজি ইত্যাদি গল্পে গ্রামীণ সমাজের দেখা মিললেও এগুলোর মূল উদ্দেশ্য গ্রামীণ সমাজ ও জীবন বর্ণনা নয়-ধর্মীয় কুসংস্কারের জালে বন্দি মানুষের গল্প বলা হয়েছে এগুলোতে। অন্যদিকে উত্তরণ, কানাভুলা, বিস্ফোরণ ইত্যাদি গল্প নিম্নশ্রেণির মানুষ নিয়ে লেখা হলেও তাদের দৈনন্দিন জীবনের বহুবিধ সংকটের বর্ণনা নেই এসব গল্পে, রয়েছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে অসাধারণ মানবিক বোধের উন্মোচনের গল্প। যেমন কানাভুলা গল্পে ধর্মীয় কুসংস্কারের (পীরপ্রথা, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ- কবজ ইত্যাদি) বিরুদ্ধে সুকৌশল প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে এক রিকশাচালকের মাধ্যমে। কিংবা উত্তরণ গল্পে এক প্রতারক দুধ-বিক্রেতার মধ্যে পিতৃস্নেহের উন্মোচন চমৎকার একটি গল্পের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। আবার বনমানুষ, প্রতিবিম্ব, বর্ণচোর প্রভৃতি গল্পের বিষয়বস্তু নাগরিক জীবন । এই নিয়ে আবু ইসহাকের শ্রেষ্ঠ গল্প ।
আবু ইসহাক শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন শিবঙ্গল গ্রামে ১৩৩৩ সালের ১৫ই কার্তিক (১লা নভেম্বর, ১৯২৬) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪২ সালে স্কলারশিপ নিয়ে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৪ সালে আই. এ পাশ করেন । এর ষোল বছর পর ১৯৬০ সালে করাচি (বর্তমান পাকিস্তান) থেকে বি.এ. পাশ করেন। দেশে বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে এবং বিদেশে কূটনৈতিক পদে তিনি কর্মরত ছিলেন। দেশের বাইরে আকিয়াব ও কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ভাইস-কনসাল ও ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্যে বিশেষ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি ১৯৬২-৬৩ সালে তাঁকে সাহিত্য-পুরস্কারে সম্মানিত করে। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে ১৯৮১ সালে তিনি সুন্দরবন সাহিত্য পদক ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তিনি ২০০৪ সালে মরণত্তোর রাষ্ট্রৃ প্রদত্ত স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। আবু ইসহাক বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল প্রতিভা। তাঁর রচিত উপন্যস ‘সূর্য-দীঘল বাড়ি’ একটি স্মরণীয় সাহিত্যকীর্তি।