"সীরাত ও মিলাদের ব্যবধান" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: বিগত কয়েকশ বছর ধরেই খ্রিষ্টানরা ২৫ ডিসেম্বর পৃথিবীব্যাপী তাদের নবী ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন উদযাপন করে থাকে। কিন্তু সারা দুনিয়া তন্ন তন্ন করেও আপনি এমন একজন খ্রিষ্টানকে খুঁজে পাবেন না, যে তার নবীর জীবনচরিত আলোচনার জন্য কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অথবা ঈসা আলাইহিস সালামের জীবনী আলোচনাকে উপলক্ষ্য করে কোনো সেমিনার বা কনফারেন্সের ব্যবস্থা করেছে। কেননা সীরাত গ্রহণ করলে, সীরাত পালন করা হলে, সীরাত নিয়ে আলোচনা করতে হলে, সীরাত সম্পর্কে জানতে কিংবা বুঝতে গেলে পরিপূর্ণ দীন ও পুরোপুরি শরিয়তকেই মানতে হয়। এ কারণে ঈসায়ীরা তাদের পয়গম্বর আলাইহিস সালামের সীরাত বাদ দিয়ে দিয়েছে। কেবল নামটুকু টিকিয়ে রাখতে জন্মসংক্রান্ত উৎসব করে যাচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বরের দিনে তাই ঈসায়ীরা মীলাদ উৎসব করে কেবলমাত্র তার জন্মসংক্রান্ত আলোচনাতেই ক্ষান্ত থাকে। আমাদের সমাজেও দেখা যায়, একশ্রেণির মানুষ ঈসায়ীদের পদচিহ্ন অনুকরণ করে করে দীন-ইসলামকে কেবল মিলাদ আর জন্মোৎসব পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। তারা মনে করে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসে দুনিয়াতে আগমন করেছেন। তাঁর আগমন একটি শুভলক্ষণ। বরকতের কারণ। ব্যস, এই টুকুই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অস্তিত্ব বরকতের কারণ অবশ্যই। তাঁর আগমনে বরকত। চলাফেরা, ওঠাবসায় বরকত। তাঁর মুচকি হাসিতে বরকত। তাঁর প্রতি কুরআন অবতরণ বরকতময়। তাঁর মক্কায় আবির্ভাব, মদীনায় প্রত্যাবর্তন সবকিছুতেই আছে বরকত। এমনকি তাঁর প্রতিটি আন্দোলন ও একেকটি স্পন্দন জুড়ে রয়েছে অফুরান বরকতের উৎস। কিন্তু তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে শুধু মীলাদ তথা তাঁর জন্ম সম্বন্ধে আলোচনাকেই মহব্বতের আলামত ও ভালোবাসার সঠিক প্রয়োগ বিবেচনা করা—এটা তো ইসলামের কোনো তরিকা হতে পারে না। ইসলামের কোনো নিয়মনীতির আওতায় এটা পড়ে না। কারণ কোনো পয়গম্বর ভূমিষ্ঠ হওয়ার ভেতরে তার পয়গাম নিহিত থাকে না; বরং দাওয়াতী পয়গাম থাকে তার জীবনাদর্শের মধ্যে। তার নবুয়তী তালীমও ছড়িয়ে পড়ে তার সীরাত আলোচনার মাধ্যমে। প্রিয় পাঠক, আলোচ্য পুস্তিকাটি মূলত মাওলানা জিয়াউর রহমান ফারুকী রহ.-এর একটি বক্তব্যের অনুবাদ; যেখানে সীরাত ও মিলাদের ব্যবধান সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে সর্বসাধারণের রাহনুমায়ীর উদ্দেশ্যে জরুরি আলোচনা করা হয়েছে।