রােমাঞ্চক রহস্যনগরী জেরুজালেমের ইতিকথা দুই মলাটে আটকে ফেলার নয় । জায়নবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে উত্থাপন করা সেই দাউদ নগরীর উপাখ্যান, কিং সলােমনের মন্দির কিংবা ইহুদি বসতির গল্পগুলাের স্বপক্ষে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের যােগাড়যন্ত্র ও তুচ্ছ নয় । আধুনিক প্রত্যক্ষণবাদী মতবাদের সঙ্গে বাদানুবাদ না করে প্রত্নবস্তু দিয়েই চলছে জেরুজালেমের ইতিহাস রচনার কাজ। মুক-বধির প্রত্নবস্তু কালের স্বাক্ষী হলেও তাদের কথা বলতে হয় প্রত্নতাত্ত্বিকের জুরানে। তাই কথিত ইহুদি বসতির দাবি, যীশুরও প্রায় ৬০০ বছর আগে নেবুচাদনেজারের আক্রমণ, সুদূর ব্যবিলনে বন্দিদশার হাহাকার, ইহুদিদের ত্রাণকর্তারূপেগান্যরাজ সাইরাসের আগমন, যীশুর আবির্ভাব ও হত্যাকাণ্ডের দাবি, রােম থেকে হিংস্র প্যাগানদের আগমণ, ভ্রষ্টাচারের অ্যালিয়া ক্যাপিটালিনা আর বাইজেন্টিয়াম থেকে আগত খ্রিস্টানদের দাপটে এক ধোঁয়াচ্ছন্ন আবেশ গ্রাস করেছে জেরুজালেমের অস্পষ্ট অতীতকে। তারপর পবিত্র কুরআনে সূরা বনী ইসরাইলের বর্ণনায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর মিরাজ গমনের স্বাক্ষ্যপ্রমাণ এ নগরীকে দেয় এক ভিন্ন মাত্রা ।
হযরত উমর রা. এর সময় মুসলিম অধিকারে আসা এ নগরী প্রত্যক্ষ করে ক্রুসেডের বর্বর গণহত্যা থেকে শুরু করে আরব ইজরাইল যুদ্ধের ভয়াল তাণ্ডবলীলা । মৌলবাদী ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইজরাইল প্রতিষ্ঠা পেলেও কালের আবর্তে জেরুজালেম ইহুদি, মুসলিম ও খ্রিস্টান মতাদর্শী মানুষের প্রতিযােগিতা আর দখলদারিত্বের বিবমিষায় এক রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চই রয়ে যায় । সবমিলিয়ে এ নগরীর ইতিহাস কিংবা ইতিহাস রচনার ইতিহাস এ দুয়ের যােগসূত্র অনেক । প্রত্নতত্ত্বের গবেষক হিসেবে বস্তুগত প্রমাণগুলােকে গুরুত্ব দিয়ে নির্মোহ ইতিহাস রচনার চেষ্টা করা যায় মাত্র । বাস্তবে সেটা কতদূর সম্ভব হয়েছে তা বিচারের দায়ভারটা নাহয় পাঠকের উপরেই ছেড়ে যায় যাক। অন্তত রহস্যনগরী জেরুজালেম নিয়ে লেখা এ বইয়ের পরিচয়পর্বটাও একটু রহস্যাবৃতই থাক।
Dr. Md. Adnan Arif Salim বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুলে ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। জন্ম পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে। লিখছেন ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে।