আমার জীবন তৃতীয় ভাগ শ্রীক্ষেত্রযাত্রা কিছু দিন পরে কনিষ্ঠ শিশু ভাই তিনটিকে সঙ্গে করিয়া, সুহৃদ্বর গণেশবাবুর পরিবারের সঙ্গে স্ত্রী কলিকাতায় আসিলেন। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ; তথাপি তিনি কিছুতেই চট্টগ্রামের বাড়ীতে রহিলেন না। এত দীর্ঘ পথ তাঁহাকে লইয়া কি প্রকারে যাইব, মনে গুরুতর ভাবনা উপস্থিত হইল । প্রসবসময় পর্যন্ত কলিকাতার নিকটবর্ত্তী কোন স্থানে আমাকে রাখিবার জন্য গবর্ণমেণ্টে বারম্বার কাতর কণ্ঠে আবেদন করিলাম। কিন্তু বৃটিশ গবর্ণমেন্ট একটি কলবিশেষ। কলের ত হৃদয় নাই ! বারম্বার নির্দয় উত্তর আসিল, আমাকে ছুটির অবসানে শ্রীক্ষেত্রে যাইতেই হইবে। মহিষের পিঠে যে উঠে, সেও যম হয়। যে ককরেল সাহেব আমাকে এত অনুগ্রহ করিতেন, তিনি এখন এই মূর্ত্তি ধারণ করিয়াছিলেন। আমার শোচনীয় অবস্থা দেখিয়া, আমার একজন বন্ধুর স্ত্রী ও কন্যা প্রসব পর্যন্ত স্ত্রীকে তাঁহাদের কাছে রাখিয়া যাইতে বিশেষরূপে অনুরোধ করিলেন। কিন্তু স্ত্রী কিছুতেই থাকিবেন না । অন্য দিকে ‘পদ্মিনী উপাখ্যানে'র কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় তখন কটকে ডেপুটি মাজিষ্ট্রেট ছিলেন । তখন ডেপুটি মাজিষ্ট্রেটদের মধ্যে এমন উন্নতমনা সদাশয় ভদ্রলোক সকল ছিলেন যে, রঙ্গলালবাবুর সহিত আমার পরিচয় না থাকিলেও তিনি আমাকে উপর্যুপরি পত্র লিখিয়া, শ্রীক্ষেত্রে যাইবার জন্য কত মতে প্রবৃত্তি দিতে লাগিলেন, এবং লিখিলেন যে, সমস্ত পথের তিনি এরূপ বন্দোবস্ত করিয়া দিবেন যে, আমার কোনও কষ্ট হইবে না। তিনি উৎকলের কত ব্যাখ্যা করিয়া লিখিলেন, — উৎকল কবির যোগ্য স্থান, এবং বিদ্যাপতি চণ্ডীদাসের মহানদীর তীরে সম্মিলন আশায় তিনি আমার পথ চাহিয়া আছেন ।