আমার জীবন : আবার চট্টগ্রামে গিরিশ্রেণী তরঙ্গের পর তরঙ্গ তুলিয়া যত দূর দেখা যায়, গাম্ভীর্য্যপূর্ণ শোভা বিস্তার করিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। বহুক্ষণ অতৃপ্তনয়নে মাতৃভূমির এই অতুলনীয় দৃশ্যাবলী দেখিয়া, আমার কক্ষে ফিরিয়া, কার্যভার গ্রহণ করিয়া, তখনই আমার চক্ষের অবস্থা ভাল নহে, এবং এই কক্ষটিতে আলোকের অভাব বলিয়া, আমি সেই দক্ষিণের কক্ষটিতে আমার সিংহাসন সরাইবার অনুমতি চাহিয়া, কমিশনরের কাছে এক ‘নোট' পাঠাইলাম। তিনি তখনই অনুমতি দিলেন, এবং পরদিনই সেই কক্ষে গিয়াছি কি না জিজ্ঞাসা করিলেন। আমি বলিলাম, রবিবার জিনিসপত্র স্থানান্তরিত করিয়া সোমবার যাইব । সোমবার আফিস হইতে গৃহে ফিরিবার সময়ে অপরাহ্ণে আমার কক্ষে আসিয়া বলিলেন—“নবীনবাবু ! আমি আপনার প্রিয় কক্ষটি দেখিতে আসিয়াছি । আহা! কি সুন্দর ‘পিকনিকে'র স্থান ! সমস্ত অট্টালিকার মধ্যে এই কক্ষটি শ্রেষ্ঠ। আমি আপনার নির্ব্বাচনী শক্তির প্রশংসা করি।” তখন অপরাহ্ণ রবিকরে সাগর-সঙ্গম তরল চঞ্চল সুবর্ণরাশির মত শোভা পাইতেছিল । নদীগর্ভস্থ দ্বীপে ও পার্শ্বস্থ পর্ব্বতে তাহার আভা প্রতিফলিত হইয়া উহারাও সুবর্ণমণ্ডিতবৎ বোধ হইতেছিল ৷ কমিশনর স্থিরনেত্রে আমার কক্ষবারাণ্ডা হইতে সেই অবর্ণনীয় শোভা দেখিতে লাগিলেন। তাঁহার কক্ষদ্বারের সম্মুখে কাঠের ফ্রেমে পর্দা থাকাতে এই দৃশ্য কিছুই দেখা যায় না। আমি বলিলাম, তিনি যদি ইচ্ছা করেন, তবে তাঁহার এজলাস এই কক্ষে স্থানান্তরিত করি। তিনি বলিলেন—“না । আমি আপনাকে বেদখল করিতে চাহি না । তবে সময়ে সময়ে এই বারাণ্ডায় বসিয়া, এই অপূর্ব্ব শোভা দেখিতে আপনার অনুমতি চাহি।” তিনি হাসিতে হাসিতে বারাণ্ডার ইষ্টকনির্ম্মিত রেলিঙ্গের উপর বসিয়া সেই শোভা দেখিতে দেখিতে কিছুক্ষণ গল্প করিয়া চলিয়া গেলেন । তাহার পরও মধ্যে মধ্যে এরূপ করিতেন। আমার এ কক্ষ দেখিয়া জজ সাহেবও তাঁহার এজলাস, অট্টালিকার তাঁহার অংশের দক্ষিণ কক্ষে সরাইয়া লইয়াছিলেন ৷