"পেন্সিলে আঁকা পরী"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: মােবারক সাহেবের গলার স্বর ভারি ও খসখসে। | কোমল করে কিছু বলতে গেলে স্বর আরাে ভারি হয়ে যায়। তবু তিনি চেষ্টা করলেন কোমল করে কিছু বলতে। মেয়েটার সঙ্গে শুরুতে একটু ভাব করে নেয়া দরকার। অল্প বয়সী মেয়ে গলা শুনেই যেন ঘাবড়ে না যায়। কী বলা যায়? নাম জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। যে কোনাে কথােপকথন নাম জানার মাধ্যমে শুরু হতে পারে। রাত এগারটা। মেয়েটি এবং তিনি বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছেন অথচ তিনি তার নাম জানেন না। বেশ মজার ব্যাপার। মেয়েটিও নিশ্চয়ই তার নাম জানে না। নাকি জানে? এ জাতীয় মেয়েরা তলে তলে খুব চালাক চতুর হয়। নামধাম সব জেনে নিয়েছে হয়তাে। মােবারক সাহেব হাসির মতাে ভঙ্গি করে বললেন, “তােমার নাম কি? মেয়েটি রিণরিণে গলায় বলল, টেপী। ‘কী নাম বললে? ‘টেপী। ট-একারে টেপ ঈ-কারে পী-- টেপী। মােবারক সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, ‘ফাজলামি করছ নাকি?” ‘ফাজলামি করব কেন? নাম জিজ্ঞেস করেছেন, নাম বললাম। মেয়েটা হাসছে। ঝনঝন শব্দে হাসছে। মােবারক সাহেব উঁচু গলায় বললেন, ‘সত্যি সত্যি তােমার নাম টেপী? আমার বড় বােনের নাম হ্যাপী। তার সঙ্গে মিলিয়ে আমার নাম টেপী। আবারাে খিলখিল হাসি। মেয়েটার গলার ভেতর কি একগাদা কৃস্টালের টুকরা রেখে দেয়া। হাসলেই ঝনঝন শব্দ। নাকি এই বয়সের মেয়েরা এ রকম করেই হাসে। মােবারক সাহেবের ধারণা হল, মেয়েটা তার সঙ্গে ফাজলামি করছে। পুচকা একটা মেয়ে ফাজলামি করছে, ভাবাই যায় না। মেয়েটার বয়স কত? কুড়ি-একুশ, নাকি তারচেয়েও কম? | মেয়েটি ফাজলামি করছে কিনা নিশ্চিত হওয়া দরকার। কীভাবে নিশ্চিত হবেন মােবারক সাহেব বুঝতে পারছেন না। হ্যাপীর সঙ্গে মিলিয়ে টেপী নাম কেউ রাখলে রাখতেও পারে। লাে-ক্লাস ফ্যামিলিতে নাম নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। প্রথম বাচ্চাটার
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।