ছেলে বেলায় মুরুব্বিদের সাথে কয়েক বার শীত মৌসুমে আমাদের এলাকার কাছের নদী ডাকাতিয়াতে মাছের পােনা সংগ্রহ করার জন্য নৌকা করে যাওয়ার সুযােগ হয়েছিল। তখন দেখেছিলাম সাত সকালে আটিয়া কলা খেয়ে জেলেরা নদীতে পােনা ধরতে নামতেন। বলা হয়েছিল আটিয়া কলা শীতে তাদের শরীরকে গরম রাখে। এর পরে গ্রাম থেকে ঢাকায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশােনার কালে যাওয়ার পথে মুন্সিগঞ্জে স্টিমার ঘাটে স্টিমার থামার সাথে সাথে সাগর কলা নিয়ে বিক্রির জন্য অসংখ্য ছােট ছােট নৌকা স্টিমারকে ঘিরে ফেলতে দেখেছি। মুন্সিগঞ্জের সাগর কলা যেমনি পুষ্ট তেমনি মিষ্টি বলে দেখেছি ও অনুভব করেছি। আরাে পরে কর্ম জীবনে দেখেছি যে সাগর কলা উৎপাদনের মূল কেন্দ্র মুন্সিগঞ্জ থেকে নরসিংদী এবং তার পরে বগুড়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে। আমাদের এলাকায় এই সময়ে সবরি কলার উৎপাদন বা লভ্যতা তেমন চোখে আসেনি। আজ কলার উৎপাদন ও লভ্যতা অবশ্য দেশের সব এলাকায়ই প্রত্যক্ষ করেছি। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন এলাকায় একটি নামকরা ভারতীয় বিভাগীয় বিপণীতে আমি গিয়েছিলাম। সেখানে কাঁচা-পাকা কলার সাথে সাথে কলার পাতা, মােচা এমনকি, আলকা বা কলা গাছের শাস বিক্রি হতে দেখেছি। বিক্রেতা বলেছেন খাওয়ার বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসবের প্রয়ােজন অভিবাসী ভারতীয় ও চীনেদের মধ্যে বিদ্যমান। আমরা এ দেশে এখন পর্যন্ত কলার পাতা, মােচা এবং আলকা বা শাঁসকে তেমন বিক্রয়যােগ্য পণ্য হিসেবে মনে করিনা । অধুনা ঢাকায় কিছু কিছু বিভাগীয় বিপণীতে কলার মােচা এবং আলকা বিক্রয়ের জন্য মজুত রাখা শুরু হয়েছে। কয়েক যুগ আগ পর্যন্ত কলার পাতায় কাংগালী ভােজের আয়ােজন দেখেছি। কলার পাতা অবশ্য দেশের উন্নয়নের এই পর্যায়ে তেমন ভাবে ব্যবহৃত হয়না। কলার পাতা, কলা গাছের ডাল ও আলকার আচ্ছাদন শুকিয়ে এখনও জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কলার খােসা উত্তম পশু খাদ্য হিসাবে ব্যবহার্য! পাকা কলা ভেজে সংরক্ষণ করাও স্থান বিশেষে নজরে এসেছে।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করার পর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তারপর সরকারের সিভিল সার্ভিসে যােগ দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক অর্থনীতি ও উন্নয়ন অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে পরে ১৯৮০ তে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ভারতের সাথে বাংলাদেশের গঙ্গা নদীর পানি বিভাজন সম্পর্কিত চুক্তি জননেত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে সম্পাদন করেন। একই বছর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক শান্তি চুক্তি প্রণয়ন ও সম্পাদনে তিনি তাৎপর্যমূলক ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৭-২০০১ সময়ে তিনি বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীপরিষদে অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন। এর আগে খালেদা জিয়ার সরকারও তাকে গ্রেফতার করেছিল। ২০০৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সমূহের আঞ্চলিক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি তিনি। সর্বশেষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অর্থনীতি সম্পর্কিত বিষয়ে লিখিত ২০টি এরও অধিক বইয়ের লেখক তিনি।