“পুতুল” বইটির সামারিঃ ১১ বছরের এক কিশোর বাচ্চা কে নিয়ে লেখা এই উপন্যাস। কাহিনী খুব বিস্তর না তবে বেশ মজার। বইটির প্রধান চরিত্র পুতুল আর সহ চরিত্র টোকাই অন্ত ও তাঁর বোন মরিয়ম। এই বইয়ের উপর নির্মিত ছবি "দূরত্ব" ও বেশ দারুন। বইটি মূলত ঐশ্বর্যের আড়ালের হারিয়ে যাওয়া কৈশোর যে কি দুর্দান্ত হতে পারে তা ফুটে উঠেছে, সেই সাথে ধনী ও গরিবের মাঝে ব্যবধান আসলে কতটুকু তা খুব সুন্দর করে বোঝা যাবে। ছোটদের জন্য খুবই শিক্ষণীয় বই, জীবন আদর্শ নিয়ে তাদের যে বোধ তা আরো জাগ্রত হবে। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য বাবা, মা, ভাই বোন বা বন্ধুরা যে কত বড় ভুমিকা রাখে তা এখানে স্পষ্টভাবে তুলে এনেছেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ। কিভাবে অনেক ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও পুতুল টোকাই অন্তু আর মরিয়মের সাথে নির্দিধায় ফুটপাতের খাবার খায়, ওদের সাথে ময়লা জামা পড়ে ঘুরে বেড়ায়, একসময় ট্রেনে করে কাউকে না জানিয়ে ওদের সাথে দূরে ময়মনসিংহ চলে যায় এবং পরতে পরতে জীবনের বাঁক খুঁজে পায় তা জানা যাবে। “পুতুল” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ পুতুলের ঘর থেকে তাদের বাগানটা দেখা যায়! এত সুন্দর লাগে তার! শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। তাদের বাগান অন্যদের বাগানের মতাে নয়। তিনটা বিশাল বড়াে বড়াে গাছ, একটা রেনট্রি গাছ। এত বড়ড়া যে মনে হয় এই গাছের পাতাগুলাে আকাশে লেগে গেছে। আর দুটি হচ্ছে কদম ফুলের গাছ। কদম ফুলের গাছ দুটি পাশাপাশি--যেন দুই জমজ বােন, এক জন অন্য জনের গায়ে হেলান দিয়ে আছে। বর্ষাকালে গাছ দুটিতে কী অদ্ভুত ফুল ফোটে। সােনার বলের মতাে ফুল। পুতুলের মা জেসমিন কদম ফুলের গাছ দুটি একেবারেই সহ্য করতে পারেননা। কারণ হচ্ছে শুয়ােপােকা। কদম গাছে খুব শুয়ােপােকা হয়। আর শুয়ােপােকা দেখলেই জেসমিনের বমি পেয়ে যায়। তিনি প্রতি শীতকালে একবার করে বলেন-- গাছগুলাে কাটিয়ে ফেলা দরকার। শেষ পর্যন্ত কেন জানি কাটা হয় না। দেখতে দেখতে বর্ষা এসে যায়। অদ্ভুত কদম ফুলগুলাে ফোটে। কী যে ভাল লাগে পুতুলের! এখন শীতকাল। ক'দিন আগে ঠিক করা হয়েছে বড়াে বড়াে গাছগুলাে সব কেটে ফেলা হবে। জেসমিন বজলু মিয়া বলে একটি লােককে ঠিক করেছেন। লােকটির মুখে বসন্তের দাগ। তার একটা চোখও নষ্ট। ভালাে চোখটি দিয়ে সে সবার দিকে বিশ্রীভাবে তাকায়। বজলু মিয়া গতকাল এসে বড়াে বড়াে গাছগুলাে সব দেখে গেছে। দড়ি দিয়ে কি সব মাপটাপও নিয়েছে। বলে গেছে সােমবারে লােকজন নিয়ে আসবে। পুতুলের এই জন্যেই খুব মন খারাপ। গাছগুলাের দিকে তাকালেই তার কান্না পেয়ে যায়। বাগানে এলেই সে এখন গাছগুলাের গায়ে হাত
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।