বাতের ব্যথা বড় ব্যথা * আজকাল বাতের রোগ বেশ বাড়ছে। দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বিশেষ করে হাঁটুতে, ঘাড়ে, কোমরে, সোলডার জয়েন্টে বাত ধরতে পারে এবং কেউ কেউ ব্যথায় কাবু হতে পারেন। বাত নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই, নিরন্তর চলছে চিকিৎসক ও গবেষকদের সাধনা বাতের সঠিক কারণ খুঁজে আসল চিকিৎসার মাধ্যমে বিভিন্ন বাতের রোগের উপসর্গকে সারিয়ে রুগীদের কর্মক্ষম রাখার। এমন কোনও ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী নেই যিনি বলতে পারেন যে তাঁর জীবদ্দশায় কোনও না কোনও সময় বাতের কবলে পড়েননি। শিশু থেকে যুবক-যুবতী, প্রৌঢ়ত্ব থেকে বার্ধক্য যে কোনও বয়সের সন্ধিক্ষণে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বাতে ভুগতে পারেন। আবার সাংঘাতিক ধরনের আরথ্রাইটিসে ভুগতে ভুগতে কেউ কেউ বাঁচার তাগিদ বা আনন্দও হারিয়ে ফেলেন। প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগতে ভুগতে কেউ কেউ আত্মহত্যাও করে বসেন। চিকিৎসক হিসাবে দেখি কত ধরনের বাতের রমরমা। রসিকপ্রবর শিব্রাম চক্রবর্তী মহাশয় বলেছিলেন, “আমার কোথাও বাত নেই, আছে শুধু মুখে বাত।” আজকাল কিন্তু দেখি বেশির ভাগ লোকেরই সর্বাঙ্গে বাতের অবাধ বিচরণ। এইতো সেদিন সদ্যবিবাহিতা একটি বধূকে তার শাশুড়ী আমাকে দেখাতে এনে বললেন, “কি মুশকিলেই না পড়েছি ডাক্তারবাবু আমাদের বৌমাকে নিয়ে! কোমরে হাঁটুতে বাত। বিয়ের সময়তো বলেনি। ভাল করে দেখে ওষুধ দিয়ে সারিয়ে দিন।” মেয়েটির দিকে চেয়ে ও তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি শঙ্কিত হয়েছিলাম। এ ধরনের সমস্যা প্রায়ই দেখি। কেউ কেউ এসে বলেন, “আমার অমুক আত্মীয় বা আত্মীয়া পঞ্চাশ ষাট বছর বয়সেও কি দারুণ সুস্থ সবল আর আমি বাতে নড়তেই পারছি না! প্লিজ একটা বিহিত করুন।” কোনও কোনও পুরুষ বা মহিলা বাতের রোগে ভুগতে ভুগতে অস্থির হয়ে বলেন, “ডাক্তারবাবু, এ যে কি ব্যথা তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। বাতে যেন কেউ না ভোগেন।” সত্যই বাতের কি কামড় ! আমি বলি, “বাতস্য কুটিলা গতি।” অর্থাৎ বাত কখন কাকে ধরে আর কুরে কুরে খায় সেটা “দেবাঃ ন জানন্তি, কুতো মনুষ্যাঃ।” আমরা চিকিৎসকরাও মাঝেমাঝেই পড়ি বিপাকে কারণ কিছু কিছু বাত আছে যাদের গতিপ্রকৃতি, আক্রমণের তীব্রতা ও ব্যথার ধরন আমাদের অর্থাৎ ডাক্তারবাবুদেরও বেশ ভাবায়।