"কায়রো ট্রিলজি (প্যালেস ওয়াক)" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: আমরা দেখতে পাই যে সময় ও দেশের রাজনীতির সাথে একটি পরিবারের জীবন কীভাবে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে যায় এবং পরিস্থিতির সাথে বিভিন্ন সময়ে কীভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে হয়। কাহিনীর বিভিন্ন পর্যায় পাঠকের মনােযােগ এড়ানাের মতাে নয়। কামাল যখন আয়িদার প্রেমে পড়ে, তখন আয়িদার সামাজিক শ্রেণি তার কাছে মুখ্য ছিল না, বরং তার সংস্কৃতি, ইউরােপীয় বােধ ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাই প্রধান আকর্ষণ ছিল। প্রচলিত ঐতিহ্যের বাইরে থেকে আয়িদা নিজের ভবিষ্যৎ স্থির করার ব্যাপারে ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন, আর কামালের মধ্যে ছিল মিশরের সার্বিক বিকাশের স্বপ্ন। মিশর নিয়ে কথা বললেই তার চোখের সামনে এসে উপস্থিত হয় আয়িদা। কিন্তু কামালের সাথে আয়িদার প্রেম ব্যর্থ হয়, যাকে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা যেতে পারে। এসময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির খুঁটিনাটি উঠে এসেছে উপন্যাসে। কায়রাে ট্রিলজি’র সুদূরপ্রসারী রূপকল্প ও ভবিষ্যতের জন্য সততা ছিল। উপন্যাসটির প্রতিটি খণ্ডের সমাপ্তি ঘটেছে একটি মৃত্যু ও একটি জন্ম দিয়ে এবং শেষ খণ্ড ‘সুগার স্ট্রিট’ মৃত্যু ও জন্ম ছিল ভবিষ্যদ্বাণীর মতাে। উপন্যাসের পরিসমাপ্তি ঘটেছে আমিনার মৃত্যু এবং তার দুই নাতি আহমদ ও আবদ আল-মুনিমের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। একজন কমিউনিস্ট, অপরজন মুসলিম বাদার। সুগার স্ট্রিটের একই বাড়ি থেকে দুই বিপরীতমুখী ও প্রতিদ্বন্দ্বী আদর্শের ধারকের উদ্ভব এবং শেষ পর্যন্ত তারা উভয়ে কারাগারে একই প্রকোষ্ঠে বন্দি। কিন্তু ট্রিলজির শেষ খণ্ডে জন্ম বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ নবজাত একজন ইসলামপন্থীর পুত্র, যা আরব জগতের বর্তমান বাস্তবতার সাথে এখনও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
(আরবি: نجيب محفوظ) (জন্ম: ডিসেম্বর ১১, ১৯১১ - মৃত্যু: আগস্ট ৩০, ২০০৬) নোবেল বিজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক। নাগিব মাহফুজ মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি মিশরীয় বিপ্লবে ১৯১৯ অংশ গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, তিনি দর্শন বিভাগে ১৯৩০ সালে ভর্তি হন মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৩৪সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন জরেন। এর পর ১৯৩৬ সালে দর্শনের গবেষণা কাজে একটি বছর অতিবাহিত করেন। পরে তিনি গবেষনা পরিত্যাগ করেন এবং একটি পেশাদার লেখক হয়ে যান। মাহফুজ তারপর আল-রিসালায়ের জন্য একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, এবং এল-হিলাল এবং আল-আহরাম ছোটোগল্প লিখতে অবদান রাখেন। নাগিব মাহফুজ ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় ৩০টি উপন্যাস লিখেলও ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত কায়েরা ট্রিলজি তাঁকে আরব সাহিত্যের এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেন। এতে তিনি ইংরেজ শাসন থেকেমুক্ত হওয়ার সময়কালে মিশরের ঐতিহ্যবাহী শহুরে জীবনধারা ফুটিয়ে তোলেন । এ উপন্যাসের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। নাগিব মাহফুজের উপন্যাসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশীর চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ১০০ টিরও বেশি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এগুলির বেশীর ভাগই পরে ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।