ফ্ল্যাপে লিখা কথা ও আমার দেশের মাটি শুধু কবির আবেগপূর্ণ উক্তি নয়, বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ ও উপলব্ধির অভিভ্যক্তি। মাটি এর বিচিত্র উপাদান, গঠন, রূপান্তর ও প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধিৎসা ও গবেষনার বিষয়। কোটি কোটি বছর ধরে ঝড়, বৃষ্টি ও রোদ, জলস্রোত, সমুদ্রের ঢেউ এবং লতাপাতা গাছ ও প্রাণীদের দেহাবশেষের পচনক্রিয়া মাটিকে প্রস্তুত করেছে। মাটি তাই কালের ছাপ বহন করে পৃথিবীর ইতিহাসকে ধারণ করে আছে। মাটি উদ্ভিদজগতের জন্য খাবার যোগায় নানা উপাদান রূপে। মাটি গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতেও সাহায্য করে। উদ্ভিদ ও প্রাণী-জগতের বিকাশ হতে পারত না, উর্বর মাটি না থাকলে। নানা রাসায়নিক উপাদান ধারণ করে রাখা ছাড়াও দানার ফাঁকে ফাঁকে মাটি ধরে রাখে পানি ও বাতাস। মাটি শুধু শক্ত বা নরম, মিহি দানার বা বড় দানার, ভেজা বা শুকনো, উর্বর বা অনুর্বর রূপেই দেখা যায় না- এর রাসায়নিক নানা গুণও আছে। মাটি হতে পারে অম্লযুক্ত বা ক্ষারযুক্ত, অথবা ধারণ করতে পারে নানা পরিমাণে বিভিন্ন রকম ধাতু। মাটি উৎস উদ্ভিদজগতের, যা সূর্যের আলোকে রূপান্তরিত ও ধারণ করছে রাসায়নিক শক্তিরূপে। মাটি উদ্ভিদের মাধ্যমে সম্ভব করেছে প্রাণিজগতের উদ্ভব ও বিকাশ- এই পৃথিবীতে। মাটি শুধু কৃষকের ফসল ফলাবার অবলম্বন নয়, গৃহনির্মাণের ও মৃৎশিল্পের উপাদানও। সবচেয়ে বড় কথা, মাটি শুধু আমাদের খাবার ও আশ্রয় যোগায় না, এর বৈচিত্র্য নিয়ে আকর্ষণীয় হতে পারে ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে। মাটি গুণাগুণ যাচাই ও বৈচিত্র্য পরীক্ষা ধরে দেখতে পারে তার বিজ্ঞানের খেলারূপে। শিশুদের সেই চাহিদা যদি মিটাতে পারে, তা হলেই শুধু এই বই লেখার শ্রম মাটি হবে না।