সারমর্ম আয়েশা অভাবের তাড়নায় তিন বছরের শিশুপুত্র জামালসহ তিন সন্তানের জনক কদম আলীকে বিয়ে করে। শারীরিকভাবে অক্ষম সতীন নার্গিস প্রথমে আয়শাকে কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে চায়নি। পরবর্তীতে সংসারের যাবতীয় কাজের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ায় শত ইচ্ছার বিরুদ্ধে থেকেও আয়শাকে নার্গিস নিজের সতীন হিসাবে মেনে নেয়। বিয়ের পর থেকে আয়শা কদম আলীর সংসারে দিন-রাত চাকরাণীর মতো খেটে যেতে থাকে। নার্গিসের বড় দুই ছেলে স্কুলে পড়তে দেখে জামালেরও স্কুলে পড়ার ইচ্ছা জাগে। আয়শা অনেক অনুনয়-বিনয় করে নার্গিসকে রাজি করিয়ে জামালকে স্কুলে ভর্তি করে। জামাল নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসা করে এবং প্রতিবছর একটি একটি ক্লাস উর্ত্তীন হয়ে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে। ইতিমধ্যে জামাল লেখা-লেখিতে মনোযোগী হয়েছে। বিখ্যাত লেখকদের বই পড়ার পাশাপাশি নিজেও কবিতা-গল্প লেখা শুরু করেছে। এস.এস.সি. পরীক্ষার পূর্বেই হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে অসুস্থ হয়ে আয়শা মৃত্যুবরণ করে। আয়শার বিবাহসূত্রে কদম আলীর বাড়িতে জামালের আশ্রয় মিলেছিল। আয়শার মৃত্যুর পরেরদিনই জামাল কদম আলীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেয় বিধবা বেদেনী পদ্মাবতীর ভাসমান নৌকাতে। পরবর্তীতে বেদে পল্লীর লোকদের মাধ্যমে জামাল ও পদ্মাবতীর নামে কুৎসা সারা গ্রামে রটে যাওয়ায় শাস্তিস্বরূপ দু’জনই গ্রাম ছাড়া হয়। জামাল জীবিকা নির্বাহের জন্য রংপুর শহরের এক হোটেলে ওয়েটারের কাজ নেয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জামালের সাহিত্যচর্চাও চলতে থাকে। এরপর বাসের হেলপার, প্রেসের হ্যান্ড কম্পোজের কাজ এবং সর্বোপরি ঢাকার কমলাপুরে কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এত কিছুর পরেও জামাল লেখা-লেখি ছাড়েনি। রাস্তার ল্যাম্প-পোস্টের বাতির আলোতেও জামালকে লেখা-লেখি করতে দেখা গিয়েছে। অবশেষে “দেশ প্রেমিক” নামে একটি বড় আকারের উপন্যাস লিখে সমাপ্তি টেনেছে। জামালের “দেশ প্রেমিক” উপন্যাসটি কোন প্রকাশকই ছাপতে রাজি নয়, ছাপার খরচ উঠে আসবেনা এই সংশয়ে। অবশ্য কোন কোন প্রকাশক টাকার বিনিময়ে ছাপতে চেয়েছেন। গর্ভবতী মায়ের পেটে দশ মাস দশ দিন সন্তান লালন পালন হওয়ার পর ভূমিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মা’র প্রসববেদনা শুরু হয়ে যায়, তেমনি অবস্থা হয়েছে জামালের বই প্রকাশ করতে না পেরে। জামাল ও হাবিবের অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর বাংলাবাজারের এক প্রকাশক “দেশ প্রেমিক” উপন্যাসটি প্রকাশ করতে রাজি হয়।
Saadat Al Mahmud- ভিন্নধারার কথাসাহিত্যিক। তিনি এক নভেম্বর ১৯৭৬ সালে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের ডুবাইল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মু. আব্দুর রাজ্জাক প্রথমে স্কুল শিক্ষক পরবর্তীতে জেলা শিক্ষা অফিসার হয়ে অবসরে যান। মাতা গৃহিণী। ছয় ভাই-বোন এর মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তার লেখা গল্প-উপন্যাস-শিশুতোষ পড়লে তাকে একজন লেখার জাদুকর বললে বেশি বলা হবে না। কথাসাহিত্যিকের পাশাপাশি তিনি নাট্যকার, প্রবন্ধকার ও সাংবাদিক। তিনি দৈনিক মুক্তকন্ঠ, নয়া দিগন্ত, ইনকিলাব, সমকাল, ঢাকা ট্রিবিউন, সকালের খবর, বর্তমান, প্রতিদিনের সংবাদ, বাংলাদেশের খবর ও দেশ রূপান্তর পত্রিকায় বিভিন্ন সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বহুল প্রচারিত দৈনিক খোলা কাগজ ও পরিবর্তন ডটকমে মহাব্যবস্থাপক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘চিতার আগুনে’ উপন্যাসটি সাদত আল মাহমুদের প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ। তার একাধিক প্রকাশিত জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে ইতিহাস ভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস যথাক্রমে এক আনা মন ও রাজাকারকন্যা, প্রসব বেদনা, রমনীদ্বয় অন্যতম। তার প্রতিটি উপন্যাসের নামকরণ অদ্বিতীয় ও আকর্ষণীয়। তিনি শিশুদের জন্য লিখেছেন ভৌতিক গল্প ‘ভূত ধরার অভিযান’ ও শিশুতোষ ‘গগেনদার গল্পের ঝুড়ি’ বইটি।