"ছন্দের সহজপাঠ"বইটির প্রথম ফ্লাপের কিছু কথা: বাঙলা ভাষায় কবিতা, ছড়া ও গান রচনার জন্য যারা ছন্দ শিখতে চান কিংবা কেবল পাঠক হিসেবেই ছন্দের সাথে পরিচিত হতে চান, তাদের জন্য এই বইটিতে রয়েছে সহজে ছন্দ শেখার এক বিস্ময়কর নতুন পদ্ধতি যা আগে কেউ ব্যবহার করেন নি।। বাজারে ছন্দশিক্ষার বইয়ের অভাব নেই কিন্তু লক্ষ করা গেছে: অনেক নবীন পাঠক ডজনখানেক বই পড়েও বাঙলা ছন্দের রীতিনীতি আয়ত্ত করতে পারছেন না কারণ ছন্দশিক্ষার প্রথাগত পদ্ধতি বেশ জটিল বৈকি! আরাে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর মূলে কাজ করছে: বাঙলা ছন্দশাস্ত্রের আদিগুরু প্রবােধচন্দ্র সেনসহ অন্য যারা ছন্দের ওপর ব্যাকরণগ্রন্থ লিখেছেন, তাঁরা প্রায় সবাই রবীন্দ্র-নজরুল যুগের, এমনকি মধ্যযুগের কবিতার পঙক্তিকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন; ফলে, নবীন পাঠক পঠিত বিদ্যা দিয়ে আধুনিকদের কবিতায় আটপৌরে (মুখের) ভাষায় রচিত পঙক্তিতে সেই ছন্দ সনাক্ত করতে পারছেন না। এ-বিষয়টি মাথায় রেখে এই বইতে বাঙলা ছন্দের তিন রীতির ক্ষেত্রেই উদাহরণ চয়ন করা হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ আধুনিক কবিদের রচনাকর্ম থেকে, এমনকি সাম্প্রতিক কালের কবিদের কবিতা থেকেও, যাতে পঠিত বিদ্যা দিয়ে নবীন শিক্ষার্থীগণ এ-কালের আটপৌরে ভাষায় লেখা কবিতায় ব্যবহৃত ছন্দও সনাক্ত করতে সক্ষম হন। দুয়েকটি ক্ষেত্রে ছন্দের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়ােজন দেখা দিলেই কেবল মাইকেল-রবীন্দ্র-নজরুল যুগ ও মধ্যযুগের কবিতার প্রসঙ্গ যৎসামান্য আলােচনায় এসেছে ‘পণ্ডিতি ভাষার বদলে অত্যন্ত পাঠক-বান্ধব ভাষায় লেখা হয়েছে বলে এই বইটি পড়ে যেকেউ বাঙলা ছন্দের অলিগলি চিনতে পারবেন-এমন প্রত্যাশা অমূলক নয়।
আবিদ আনােয়ার-এর জন্ম ১৯৫০ সালের ২৪ জুন কিশােরগঞ্জ জেলায় কটিয়াদী থানার চর আলগী গ্রামে। বাবা মােঃ আজিমউদ্দিন ও মা হাসিনা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্সসহ ১৯৭২ সালে এমএসসি এবং পরে ১৯৮৭ সালে কেবল লেখালেখির সূত্রেই বিশ্বব্যাংকের বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেকর্ড মার্কসহ সাংবাদিকতায় এমএ পাশ করেন। সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের National Journalism Scholarship Society-1 সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। কবিতা, ছড়া, গল্প ও গান রচনায় এবং সাহিত্য সমালােচনায় তিনি সমান পারদর্শী । প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা চৌদ্দ ।। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখালেখির জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি পদক, সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৯৬ সালে রাইটার্স-এর স্মারক পদক ও সংবর্ধনা, ১৯৯৭ সালে । বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সংবর্ধনা ও স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি পুরস্কার সৈয়দ নজরুল ইসলাম পদক এবং ২০০৬ সালে সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চাকুলিয়া ক্যাম্প থেকে কমান্ডাে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে কিশােরগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধ করেন। ধূলদিয়া রেলসেতু অপারেশনে কৃতিত্বের জন্য । স্বাধীনতার পর কিশােরগঞ্জ মহকুমা মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্পের প্রথমে সহ-অধিনায়ক ও পরে অধিনায়কের দাযিত্ব পান। তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-র প্রকাশনা বিভাগে কনসালট্যান্ট এডিটর হিসেবে।