ফ্ল্যাপঃ সমৃদ্ধ মননের জয়িতার সাথে স্বামীর সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠলে তাকে পরিত্যাগ করে জয়িতা মানসিক প্রশান্তির প্রত্যাশায় তার একজন প্রিয় ঔপন্যাসিকের শরনাপন্ন হয়। অফিস থেকে দীর্ঘ ছুটি নিয়ে প্রিয় ঔপন্যাসিককে জানার আগ্রহ থেকে তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য জয়িতার এই যাত্রা এক অভিযাত্রায় পরিণত হয়। ‘গোধূলিমায়া’ গ্রামের মানুষদের নিয়ে যে তরুণ তার স্বপ্নকে রক্ত-মাংসের রূপ দিতে মরিয়া জয়িতার আগমনে তার মনলোকে ঘটে যায় অদ্ভুত সব ঘটনা। তাকে জানতে গিয়ে জয়িতার অনুভবের কোরকে লালিত স্বপ্নরা একে একে জেগে ওঠে তার নিজের অন্তর্লোকে বাস করা সত্যটুকুর উদ্ভাসন। জয়িতা প্রিয় লেখককে তার নিজের জীবনালেখ্য শোনাতে গিয়ে নিজেই হয়ে ওঠে এক গল্পের প্লট। ঔপন্যাসিকের জীবনে ঘটে যাওয়া গল্পের উন্মোচনে সে ক্রমশ নিজেকেই আবিস্কার করতে থাকে। আবিস্কার করতে থাকে গল্পকার এবং স্বপ্নদ্রষ্টা তরুণ প্রতীকের পাশে বাস করা আরো এক জয়িতার ভালোবাসার অনন্য ধরণ। নিজের ভিতরের বাস করা জয়িতার দর্শন এবং প্রেমের রসায়ন তার নিজের কাছে স্পষ্ট হয়। অন্যদিকে তার প্রাক্তন স্বামী এই প্লটে বিজেতা হয়ে ওঠার জন্য ‘খেয়া’ নামের আরো একটি গ্রামের ধর্মীয় উন্মেষে রাজনীতির ঘোর-সওয়ার চাপিয়ে ঈশান কোণে জমিয়েছে কালো মেঘের আঁধার। তার উদ্দেশ্য যত না জয়িতাকে উদ্ধার করা তার চেয়েও ঔপন্যাসিকের স্বপ্নে গড়া ভুবনের দখল নেওয়া।
‘আমরা যে জীবন যাপন করছি তা কিন্তু আমাদের সত্যিকারের জীবন নয়। যে জীবনের কথা ভাবতে আমরা ভালোবাসি, যে জীবনের গল্প আমরা বারবার করি –সেটাই আমাদের প্রকৃত জীবন’ –মার্কেজের এই উপলব্ধি যেন কাজী রাফির উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় ছড়িয়ে আছে। ‘গ্রামটির নাম গোধূলিমায়া’ উপন্যাসের তিন জয়িতাই সমাজের রক্তচক্ষু আর বিধিনিষেধকে পায়ের তলায় মাড়িয়ে সেই প্রকৃত জীবনকেই আলিঙ্গন করতে চেয়েছে। প্রেম-রসায়নের অদ্ভুত দর্শনে পুষ্ট এই উপন্যাসে লেখকের অনুভব জাগানিয়া বর্ণনায় পাঠকের অন্তর্বীণায় খেলা করে শীতের এক সরিষাক্ষেত, গোধূলিমায়ার কোলঘেঁষা নদীর জল, জোছনাভেজা বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ছড়ানো অথচ গোপন এক জীবনরহস্য। কাজী রাফির নিপুণ বুঁননের পটুত্বে পাঠক উপলব্ধি করেন, এই জীবন এক মায়ার কুহেলিকা! তিন জয়িতার জীবন, গোধূলিমায়া অথবা খেয়া গ্রামের আলো-ছায়ার প্রহেলিকায় বহমান দিন-রাত, তাদের চিরন্তন ভালোবাসায় গোধূলিমায়া হয়ে যায় তাদের এক আপন অনুভবের নির্যাস।
কথাসাহিত্যিক কাজী রাফি ১৯৭৫ সালের ২২ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী রইচ উদ্দীন এবং মাতার নাম ফিরোজা বেগম। তিনি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশনসহ কমিশনপ্রাপ্ত হন । পরবর্তীতে তিনি নিজ ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন। ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ উপন্যাস তার লেখা প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসেই তিনি পাঠক এবং বোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ , ‘ত্রিমোহিনী’ , রূপডাঙ্গার সন্ধানে’ , ‘পাসওয়ার্ড’ , ‘রংধনুর সাঁকো’, ‘লে জোঁ নদীর বাঁকে’, নিঃসঙ্গতার নগ্ন খোলস’, অরোরার আঙুল’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’র জন্য পেয়েছেন ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার-১০’ এবং ‘এম এস ক্রিয়েশন (শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ) সম্মাননা’ । উপন্যাস এবং ছোটগল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘নির্ণয় স্বর্ণপদক-২০১৩ ।