সম্পাদকের ভূমিকা তরুণরা কেবল ফেসবুক আর ইউটিউবে ডুবে থাকে না, তারা লেখালেখিও করে। কেবল মাদকের প্রতি আসক্তি নয়, সৃজনশীলতায়ও তারা মুখর করে রাখে সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গন। এ কেবল তাত্ত্বিক কথা নয়। তাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এ আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা। এটাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। আর তাই এ প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ গল্পকারদের ২৫ গল্প ছাপানোর উদ্যোগ নিই শব্দঘর গল্পসংখ্যায় (অক্টোবর ২০১৭)। পূর্বপ্রজন্মের প্রতিষ্ঠিত কথাশিল্পীদের ২৫ গল্পও একইসঙ্গে প্রকাশ করেছিলাম, যা এ সময়ের তরুণ লিখিয়েদের সমুখে এক বড় সুযোগ এনে দেয়- তারা জ্যেষ্ঠ প্রজন্মের কথাশিল্পীদের সঙ্গে নিজেদের লেখা মিলিয়ে নিতে পেরেছে। তরুণরা আমাদের সাহিত্যের অগ্রগামী ধারাকে কীভাবে ধারণ করতে পারছে, এগিয়ে নিচ্ছে, আদৌ পারছে কী না এগিয়ে নিতে, তা বিবেচনা করতেও পেরেছে বলে বিশ্বাস। শব্দঘর অক্টোবর ২০১৭ গল্পসংখ্যা প্রকাশের পর সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা উচ্চারিত হয়। বাদ-পড়া নবীন-প্রবীণের প্রতি দল থেকে আরও পাঁচ গল্পকারকে আমরা বেছে নিই। আর এভাবেই ‘বাংলাদেশের তরুণদের ৩০ গল্প / বড়দের তরুণবেলার ৩০ গল্প’ নিয়ে একটা গল্পসংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে ফেলি। এখানে তরুণদের বয়স ৪০-এর নীচে ধরা হয়েছে। আর বড়দের ধরা হয়েছে ৫৫ বছরের ওপরে। তবে দুজন লেখকের বয়স ৫৫ বছরের কিছু কম হলেও আমরা গ্রহণ করেছি। কারণ এই দুজন আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয় ও বরণীয় বিবেচিত হবেন বলেই আমরা মনে করেছি। এ উদ্যোগ সফল হলে ৪০ থেকে ৫৪ বছর বয়সি লেখকদের আরেকটি গল্পসঙ্কলন প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। একই সঙ্গে থাকবে আরও একদল সম্ভাবনাময় প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কথাশিল্পীর লেখা নিয়ে শব্দঘরের গল্পসংখ্যা (২০১৮) এবং গ্রন্থমেলায় (২০১৯) সঙ্কলিত বই প্রকাশের পরিকল্পনা। আর এ উৎসাহ ও আগ্রহের সার্থক রূপায়ণে ইতিমধ্যেই এগিয়ে এসেছেন বিদ্যাপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী জনাব মজিবর রহমান খোকা। তাঁকে ধন্যবাদ, ঢাউস আকারে বর্তমান সংকলনটি প্রকাশ করতে বিপুল অঙ্কের টাকা লগ্নি করার জন্য। একটি কথা না-বললেই নয়- জ্যেষ্ঠ বয়ঃক্রমের যে-কজন কথাসাহিত্যিক আমাদের বিবেচনায় ছিলেন, তাঁদের কয়েকজনের গল্প আমরা নানা কারণে সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আরেকটি কথা- সকল মেধাবী তরুণ কথাশিল্পীকে যে আমরা খুঁজে পেয়েছি, তা নয়। আমাদের সীমাবদ্ধতার আড়ালে নিশ্চয় রয়েছে আরও অনেকে। তাদেরকেও কেউ না কেউ খুঁজে বের করবেন অথবা আপন আলোর উদ্ভাসে তারা আমাদের আলোকিত করবে, বিশ্বাস রাখি। জন্মবীজ আর পরিবেশের শিক্ষণ-প্রেরণা লেখকসত্তার বুনিয়াদ গড়ে দেয়। এই বুনিয়াদ ছাড়া হঠাৎ কেউ লেখক হিসেবে দাঁড়াতে পারে না। ব্যতিক্রম আছে। আচমকা অনেকে সাহিত্য জগতে সূর্যের দীপ্তি ছড়িয়ে হাজির হয়েছেন- এমন উদাহরণ যে নেই, তা নয়। তবে সংখ্যায় কম। তারাও ছেলেবেলা থেকে নিশ্চয় এমন কিছু অনুষঙ্গ নিয়ে বড় হয়েছেন যা তাঁদের কলমমুখী করেছে, বইমুখী করেছে, বই পড়ায় উৎসাহ জুগিয়েছে। তারা আনন্দ পেয়েছেন কলম দিয়ে শব্দচাষের। ফলে তাঁরা বইপাড়ামুখী হয়েছেন, বইমেলামুখী হয়েছেন; নিজেদের অজান্তেই সাহিত্যের শেকড়ের সঙ্গে নিজেদের নাড়ির বন্ধনকে প্রবলভাবে সেঁটে নিয়েছেন। এই আঁঠা যত শক্তিশালী হবে জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রেই বিচরণ করুন না কেন, তারা সাহিত্যমুখী হতে বাধ্য হবেন, সাহিত্যে লেগে থাকবেন- এমন সাহিত্যপ্রেমীর সংখ্যা পৃথিবীতে কম নেই। সব ধরনের চাপ, হতাশা, ব্যর্থতা ফুঁড়ে এ ধরনের সাহিত্যিকেরা সবার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন; সাহিত্যের অগ্রগামী ধারাকে ধারণ করে পথও চলতে পারেন। শত বাধা ডিঙিয়ে তাঁরা এগিয়ে যেতে থাকেন শেকড়ের টানে..
Title
বাংলাদেশের তরুণদের ৩০ গল্প বড়দের তরুণবেলার ৩০ গল্প
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।