“হঠাৎ দেখা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ নীললােহিত এক আশ্চর্য যুবা যার বয়স কোনদিন সাতাশের বেশি হয় না। সে জন্ম-বাউণ্ডুলে, চাকরি করে না, দাদার হােটেলে খায় আর আত্মীয়-স্বজনদের গালমন্দ সহ্য করে। মায়ের আদরের নিলু । হঠাৎ দেখা নীললােহিতের এক অনুপম উপন্যাস যেখানে কয়েকটি চরিত্র তাদের পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে উঠে এসেছে। প্রধানত মণীশ ও নীললােহিতের অ্যাডভেঞ্চার এ কাহিনির উপজীব্য। টাকা ফুরােবার আগেই তারা বাড়ি ফিরে এসেছিল। বিশেষত ছারপােকার অত্যাচারে তারা বড় মনমরা হয়ে পড়েছিল। তাদের দু’জনের বাড়িতে অবশ্য অভ্যর্থনা হয়েছিল দু’রকম। মণীশ যে নিজে থেকেই আবার ফিরে এসেছে, এতেই তার বাড়ির লোেক এত খুশি হয়ে গেল যে তাকে একটুও বকুনি দিল না, বরং তার আদর-যত্ন বেড়ে গেল। আর নীললােহিত বাড়ির লােককে অকারণ দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল বলে বাবার হাতে প্রচণ্ড মার খেল। কিন্তু তারপরে যতবারই তাদের ঐ ব্যর্থ অ্যাডভেঞ্চারের কথা নীললােহিত ভেবেছে, ততবারই তার মনে পড়েছে সেই ইজের পরা ছেলেটির কথা। নদীর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছেলেটি, মা-আ-আ বলে কাঁদছিল, কী অসম্ভব করুণ সেই আর্তনাদ! নীললােহিত তার বন্ধুর সঙ্গে শখ করে বাড়ি থেকে পালাতে গিয়েছিল, আর ঐ ছেলেটিকে তার বাড়ির লােকই ফেলে পালিয়েছে! কী মর্মন্তুদ সেই কাহিনি...
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।