দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর। তাঁরই তাওফিকে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণের কাজ সমাপ্ত হলো। দ্বিতীয় সংস্করণটি পাঠকের হাতে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে গ্রন্থটির প্রতি পাঠকের চাহিদা ও আগ্রহ; ১ম সংস্করণ শেষ হওয়ার আগে যা বুঝতে পারিনি। তাই তাদের প্রতিও রইল আন্তরিক অভিনন্দন। গ্রন্থটি ইতিহাস বিষয়ক হলেও রাজনীতির ছোঁয়া এড়ানো যায়নি। কেননা, সবকিছু নিয়েই ইতিহাস রচিত হয়। তদুপরি বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি যেহেতু বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র পরিচিতির পাশাপাশি চলমান ইতিহাসের উপর থেকে মিথ্যার আবরণ ঝেড়ে ফেলে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করার মিশন; আর ইতিহাস বিকৃতির এজেন্ডাটা রাজনৈতিক বুর্জুয়ারাই বাস্তবায়ন করে থাকে, তাই রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কিছু আলোচনা গ্রন্থটিতেও স্থান পেয়েছে। তবে তা রাজনৈতিক আলোচনা হিসেবে নয়; বিষয়বস্তু অনুধাবনে অনুগামি হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করছি প্রিয় পাঠক যদি রাজনৈতিক চশমা দ্বারা অবলোকন না করে, দেশপ্রেমের নিরপেক্ষ চশমা দ্বারা অবলোকন করে, তাহলে গ্রন্থটিকে নিরেট দেশপ্রেমের উদ্দীপক হিসেবেই পাবে। তা সত্ত্বেও গ্রন্থটির কোনো অংশ যদি অনাকাক্সিক্ষতভাবে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শী পাঠককে পীড়া দেয়, তাহলে তার জন্য শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। দ্বিতীয় সংস্করণে বেশকিছু নতুন তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। তা ছাড়া প্রথম সংস্করণে যেসব তথ্য-উপাত্ত অন্য কোনো গ্রন্থের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশই দ্বিতীয় সংস্করণে মূল উৎসের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রয়োজনানুপাতে কোথাও কোথাও বাচনভঙ্গি ও উপস্থাপনার ধরন পাল্টানো হয়েছে। এমনিভাবে বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক না হওয়ায় কিছু বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি গ্রন্থটিকে নির্ভরযোগ্য তথ্য বিবরণির মাধ্যমে আরও গ্রহণযোগ্য করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমরা আশা করছি দেশপ্রেমিক পাঠক গ্রন্থটিকে আরও প্রাঞ্জল ও তথ্যনির্ভর পাবেন। সবশেষে কথা হলো, দেশ ও সামাজিক সভ্যতা ধীরে ধীরে অমানবিক দানবদের হাতে জিম্মি হচ্ছে; তা প্রত্যেক সচেতন মানুষই অনুভব করছেন। দেশের পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠছে। যেখানে অবাধ্যতা পরিবার ধ্বংস করছে, অসভ্যতা সমাজ ধ্বংস করছে আর মিথ্যা ও প্রতিহিংসা রাজনীতি ধ্বংস করছে। যারফলে ঝগড়া-বিচ্ছেদ পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে, পশুত্ব-অশ্লীলতা সামাজিক রীতিতে এবং গু-ামী-ভ-ামী আর মিথ্যা ও প্রতিহিংসা রাজনৈতিক শিল্পে পরিণত হয়েছে। আর সবগুলোতেই প্রভাবক হিসেবে ছড়ি ঘুরাচ্ছে রাজনৈতিক বুর্জুয়ারা। ওরাই ক্ষমতা, প্রভাব বিস্তার, প্রতিহিংসা ও প্রবৃত্তির চাহিদা বাস্তবায়নে এদেশের পরিবার ও সামাজিক পবিত্রতা ধ্বংস করার মিশনে নেমেছে এবং ক্ষমতায় থাকার বিনিময়ে প্রভুদের সঙ্গে সওদাবাজি করছে। নিজেদের প্রয়োজনে দেশ ও জনতার স্বার্থ নিলামে তুলছে। জান, মান আর সম্পদের নিরাপত্তার ভয়ে এসব দানবের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে না। অধিকাংশই নীরবতাকে নিরাপত্তার উপায় মনে করছে। অথচ বাস্তবতা হলো এ ধরনের জাতীয় ও বৃহত্তর ইস্যুতে নীরবতা অবলম্বন করলে একটা সময় আমাদেরকে মনস্তাত্বিক পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা পরাধীনতায় এবং কল্পিত নিরাপত্তা আপদে পরিণত হবে। একটা সময় মিথ্যাবাদি দানবদের স্বপ্নই বাস্তবায়িত হবে। মিথ্যা-ই সত্য ইতিহাস হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে, আর সত্যটাকেই মিথ্যা হিসেবে পরিচিত করা হবে। ওদের এই বিষাক্ত মিশন রুখতে হলে কাউকে না কাউকে তো কথা বলতেই হবে। সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। অবশেষে দেশ-মাতৃকার কল্যাণার্থে এটাই বলব, অসত্যের রাজ্যে নীরবতা ভেঙ্গে জেগে উঠুক বিক্ষুব্ধ সত্যরা। ব্যর্থ হোক দানবদের মিশন। আবহমান কালের জন্য বাংলার আকাশে উড্ডীন হোক স্বাধীনতা ও তাওহিদের পতাকা। আমিন।