ফ্ল্যাপে লিখা কথামিসির আলী সমগ্র-১ এর উপন্যাস সমূহ * দেবী * নিশীথিনী * নিষাদ * অন্যভুবন * বৃহন্নলা * ভয় * বিপদ * অনীশ * মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য * আমি এবং আমরা * তন্দ্রাবিলাস * হিমুর দ্বিতীয় প্রহর * আমিই মিসির আলি * বাঘবন্দি মিসির আলি * কহেন কবি কালিদাস * হরতন ইশকাপন * মিসির আলির চশমা ভূমিকাঃ মিসির আলির সব লেখা এক মলাটের ভেতর। পাঠকদের জন্যে সুসংবাদ না দুঃসংবাদ বুঝতে পারছি না। দুর্মূল্যের বাজারে মিসির আলি সাহেবের মতো ভালো মানুষ আটশ টাকা নিয়ে নেবেন? বইয়ের না-কি আটশ টাকা। আমার জন্য ভালো হয়েছে। ছড়ানো ছিটানো মিসির আলি এক সঙ্গে পাচ্ছি। অনন্যার মনিরকে ধন্যবাদ। হুমায়ূন আহমেদ ২৪-০৭--২০০৮ নুহাশ পল্লী
“মিসির আলি সমগ্র-২” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ মিসির আলি অবাক হয়ে কুয়াশা দেখছেন। কুয়াশা দেখে অবাক বা বিস্মিত হওয়া যায় না। তিনি হচ্ছেন। কারণ কুয়াশা এক জায়গায় স্থির হয়ে নেই। সে জায়গা বদল করছে। তার সামনে মাঝারি সাইজের আমগাছ। কুয়াশায় গাছ ঢাকা। ডালপালা পাতা কিছু দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ কুয়াশা সরে গেল। আমগাছ দেখা গেল। সেই কুয়াশাই ভর করল পাশের একটা গাছকে, যে গাছ তিনি চেনেন না। বাতাস কুয়াশা সরিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিচ্ছে এই যুক্তি মেনে নেয়া যাচ্ছে না। বাতাস বইলে তিনি টের পেতেন শীতের বাতাস শরীরে কাঁপন ধরায়। এই কুয়াশার ইংরেজি কি Fog না-কি Mist? শহরের কুয়াশা এবং গ্রামের কুয়াশা কি আলাদা? শহরের ধূলি ময়লার গায়ে চেপে যে কুয়াশা নামে। তাকে কি বলে Smog? মিসির আলি বেতের মােড়ায় চাদর গায়ে দিয়ে বসে আছেন। তাঁর পায়ে উলের মােজা। শিশিরে মােজা ভিজে যাচ্ছে। হাতে Louis Untermeyer নামের এক ভদ্রলােকের বই নাম Poems, বইয়ের পাতাও শিশিরে ভিজে উঠছে। তিনি কইলাটি নামের এক গম্রামে গত দু'দিন ধরে বাস করছেন। এখন বসে আছেন দোতলা এক হলুদ রঙের পাকা বাড়ির সামনে। বাড়ি কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সূর্য উঠলে প্রথমেই তাঁর গায়ে রােদ পড়বে। সূর্য উঠছে না। তার চা খেতে ইচ্ছা করছে। তাকে চা দেয়া হচ্ছে না। তার জন্যে টাটকা খেজুরের রস আনতে লােক গিয়েছে। কইলাটি হাইস্কুলের হেডমাস্টার তরিকুল ইসলাম এমএ বিটি বলেছেন-খেজুরের রস এক গ্লাস খাবার পর চা দেয়া হবে। তার আগে না। খেজুরের রস নাকি খালি পেটে খেতে হয়। তরিকুল ইসলাম এই মুহূর্তে মিসির আলির আশেপাশে নেই। বাড়িতে ভাপাপিঠা রান্না হচ্ছে। তিনি পিঠার খবরদারি করছেন। পিঠা জোড়া লাগছে । ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। এই নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে রাগারাগি করছেন। গতকাল সূচিপত্রমিসির আলি! আপনি কোথায়? *মিসির আলি Unsolved *পুফি *যখন নামিবে আঁধার
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।