"অরিয়েন্টালিজম" বইটি সম্পর্কে ভেতরের কিছু অংশ: ১৯৭৫-৭৬ সালের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধকালীন বৈরুত সফররত জনৈক ফরাসি সাংবাদিক ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরােনাে শহর দেখে দুঃখ করে লিখেন, “একবার মনে হয়েছিলাে এটি ....শ্যাব্রো ও নেরভালের প্রাচ্যেরই অংশ”। জায়গাটা সম্পর্কে তার ধারণা সঠিক, বিশেষত একজন ইউরােপীয়’র যতােটা সঠিক হওয়া দরকার। প্রাচ্য তাে অনেকটা ইউরােপেরই উদ্ভাবন; সেই প্রাচীনকাল থেকে রােমান্স, আশ্চর্য সব প্রাণী, মন-উতল-করা স্মৃতি ও প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি আর অন্যরকম অভিজ্ঞতার দেশ। এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে, এক অর্থে হারিয়ে গেছে; তার দিন শেষ। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় প্রাচ্যবাসীদের নিজস্ব কিছু যে হারিয়ে যেতে বসেছে, এমনকি শ্যাব্রো ও নেরভালের যুগেও ওরাই যে এখানে বাস করেছে এবং এখন যে প্রাচ্যের মানুষগুলােই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তা হয়তাে ফরাসি সাংবাদিকের কাছে। প্রাসঙ্গিক মনে হয়নি। একজন ইউরােপীয় পর্যটকের নিকট প্রধান ব্যাপার হলাে প্রাচ্য ও তার সমকালীন পরিণতিকে ইউরােপের মনমতাে তুলে ধরা। দু’টো বিষয়ই ফরাসি সাংবাদিক ও তার পাঠকদের কাছে সুবিধাজনক সম্প্রদায়গত গুরুত্ব বহন করে। প্রাচ্য সম্পর্কে আমেরিকানদের অনুভূতি ঠিক ওরকম হবে না। তাদের কাছে। প্রাচ্যের অনুষঙ্গ, সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে, দূরপ্রাচ্যের (বিশেষত জাপান ও চীনের) সাথে সম্পর্কিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। প্রাচ্য একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে ইউরােপীয়-পশ্চিমা অভিজ্ঞতায়। সে অভিজ্ঞতার আলােকে চিত্রিত হয়েছে যে প্রাচ্য সেই প্রাচ্যের সাথে সামঞ্জস্য স্থাপনের কৌশলকে আমি বলছি অরিয়েন্টালিজম বা প্রাচ্যতত্ত্ব। আমেরিকানদের নেই, তবে অরিয়েন্টালিজমের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে ফরাসি ও ব্রিটিশদের; জার্মান, রুশ, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, ইতালীয় ও সুইসরা স্বল্প হলেও সে ঐতিহ্যের অধিকারী।
এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদের জন্ম ১৯৩৫ সালে, ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে এক এপিসকোপ্যালিয়ান খ্রিস্টান পরিবারে। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর উদ্বাস্তুর নিয়তি মেনে কিশাের বয়সে পরিবারের সাথে মিশরে পাড়ি জমান। কিছুকাল কায়রাের ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এখানে মাউন্ট হারমান স্কুল, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পাঠ শেষে ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যােগদান করেন। ওখানেই আজীবন ইংরেজি ও তুলনামূলক সাহিত্য পড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইংল্যান্ডের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্ব পালন করেন। ফিলিস্তিনী মুক্তি আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন সাঈদ। ১৯৭৭ সালে প্রবাসী ফিলিস্তিন পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে ইসরাইল-ফিলিস্তিন চুক্তিসংক্রান্ত মতবিরােধে পদত্যাগ করেন তিনি। এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের পিতা সাঈদ প্রায় এক যুগ ধরে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান মানুষটি।