"লাভ ইন দ্য রেইন" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: ১৯৬৭ সালে মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে পরাজয় ঘটে আরবদের। এই পরাজয়ে একদিকে যেমন দুর্বহ বেদনাভার অন্যদিকে আত্মসুখের সন্ধান-এই বৈপরীত্য নিয়ে এগিয়ে চলা কায়রোর নাগরিক সমাজের এক অন্তরঙ্গ চিত্র এই ‘লাভ ইন দ্য রেইন’। একটা প্রজন্ম কিছুতেই ভুলতে পারে না, শৃঙ্খলিত মাতৃভূমির কথা। মাতৃভূমির মুক্তি কামনা তাদের অন্তরে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মতো সতত বহমান। কিন্তু নতুন প্রজন্মের অনেকের মধ্যে সেই মূল্যবোধ, সেই অনুভূতির অভাব কঠোরতর হয়ে আঘাত হানে তাদের হৃদয়ে। নতুন প্রজন্মের অনেকে চায় একটা নিশ্চিন্ত, নিরুদ্বেগ সুখের নীড়। যুদ্ধ-হানাহানি থেকে দূরে সরে গিয়ে তারা আপন মেধাকে বিকশিত করতে চায়, ভালোবাসতে চায়, স্বপ্ন দেখতে চায় নতুন করে। ইসরাইলের কাছে অপ্রত্যাশিত এই পরাজয়ে আরবরা বজ্রাহতের মতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সত্যি কিন্তু কোনো একটা ঘটনা, তা যত প্রবলই হোক, জীবন থেমে থাকে না। তাই সেখানে একদিকে যেমন ছিল যুদ্ধ, অন্যদিকে ছিল প্রেম-বিরহ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না। সমাজের স্তরে স্তরে জমে থাকা অন্ধকার, ভণ্ডামিগুলো এ উপন্যাসে আঁকা হয়েছে যেমন নিপুণ হাতে তেমনি মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সত্যিকারের প্রেমাস্পদকে খুঁজে নেয়ার মতো সুন্দর দিকগুলোও রঙিন হয়ে উঠেছে নাগিব মাহফুজের লেখনীতে।
(আরবি: نجيب محفوظ) (জন্ম: ডিসেম্বর ১১, ১৯১১ - মৃত্যু: আগস্ট ৩০, ২০০৬) নোবেল বিজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক। নাগিব মাহফুজ মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি মিশরীয় বিপ্লবে ১৯১৯ অংশ গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, তিনি দর্শন বিভাগে ১৯৩০ সালে ভর্তি হন মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৩৪সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন জরেন। এর পর ১৯৩৬ সালে দর্শনের গবেষণা কাজে একটি বছর অতিবাহিত করেন। পরে তিনি গবেষনা পরিত্যাগ করেন এবং একটি পেশাদার লেখক হয়ে যান। মাহফুজ তারপর আল-রিসালায়ের জন্য একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, এবং এল-হিলাল এবং আল-আহরাম ছোটোগল্প লিখতে অবদান রাখেন। নাগিব মাহফুজ ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় ৩০টি উপন্যাস লিখেলও ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত কায়েরা ট্রিলজি তাঁকে আরব সাহিত্যের এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেন। এতে তিনি ইংরেজ শাসন থেকেমুক্ত হওয়ার সময়কালে মিশরের ঐতিহ্যবাহী শহুরে জীবনধারা ফুটিয়ে তোলেন । এ উপন্যাসের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। নাগিব মাহফুজের উপন্যাসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশীর চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ১০০ টিরও বেশি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এগুলির বেশীর ভাগই পরে ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।