বাঙালির হাজার বছরের জীবন-জীবিকা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি কৃষিনির্ভর। কৃষিকে কেন্দ্র করেই বাঙালির মানসপট গঠিত। সময়ের বিবর্তনে। পৃথিবীতে মানুষ যেমন বাড়ছে, বাড়ছে খাদ্যচাহিদা। পরিবেশ প্রকৃতি এই খাদ্যচাহিদার অনুকূলে থাকছে না। জলবায়ুর পরিবর্তন বর্তমান সময়ের জন্য সবচেয়ে বড়াে উদ্বেগের বিষয়। অন্যদিকে বিশ্বায়নের প্রভাবে মানুষের জীবন সংস্কৃতিতে নেগেছে নানামুখী উন্নয়ন। স্বপ্নের ছোঁয়া। এই পথ ধরেই এসেছে বাণিজ্যিক কৃষি। দেখা গেছে শত শত বছরের কৃষিজীবী পরিবারগুলাে শ্রমিক ব্যয়ের আধিক্য, নগরমুখী। স্বপ্ন ও বাণিজ্যিক লাভের চিন্তায় কৃষি থেকে সরে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নগরের বড়াে বড়াে ব্যবসায়ীরা লাভজনক ক্ষেত্র হিসেবে বিনিয়ােগ করছেন কৃষিতে। নতুন বিনিয়ােগকারীদের কাছে অল্প জায়গায় বেশি ফসল ফলানাে, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সারাবছর চাহিদামাফিক ফসল ফলানাে, বিষমুক্ত ফল-ফসল উৎপাদনসহ অনেক বিষয় সামনে এনে কৃষিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এটি নতুন যুগের কৃষি বিবর্তনেরই একটি অংশ। ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে, রয়েছে কিছু সংশয়ের দিকও। সেই জায়গায় এসে দখল করবে যন্ত্র ও প্রযুক্তিনির্ভর স্বয়ংক্রিয় ও নিয়ন্ত্রিত এক কৃষিব্যবস্থা, যেখানে কৃষিও হয়ে উঠবে কর্পোরেট। এই বিষয়গুলােরই বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা নিজের কাজের অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। এই বইটিই পারে আমাদের উৎপাদন সেক্টরের হালনাগাদ চিত্র দেখাতে।
Shykh Seraj কৃষি সাংবাদিকতায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কার জাতিসংঘের এ এই বুর্ম অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্ম ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬, চাঁদপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন গণমাধ্যমের সঙ্গে । টেলিভিশন জীবন শুরু করেন সত্তরের দশকের শেষ দিকে। ১৯৮২ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ’। সেই থেকে দেশব্যাপী পরিচিতি মাটি ও মানুষের শাইখ সিরাজ হিসেবে। ১৯৯৫ সালে ৩৯ বছর বয়সে উন্নয়ন সাংবাদিকতায় পান সর্বোচ্চ রাষ্ট্ৰীয় পুরস্কার একুশে পদক। ১৯৯৬ সালে তিনি অন্যতম অংশীদার হিসেবে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল আই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২০০৪ সাল থেকে চ্যানেল আইতে শুরু করেন কৃষি ও কৃষকের জন্য গণমাধ্যম কার্যক্রম “হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ এবং “হৃদয়ে মাটি ও মানুষের ডাক' । ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার উপস্থাপিত ও পরিচালিত অনুষ্ঠান “কৃষি দিবানিশি শুরু হয়। একইসঙ্গে তিনি মুদ্রণ মাধ্যমেও চালু রেখেছেন কৃষি সাংবাদিকতা। ২০০৭ সালের ৩ আগস্ট থেকে দৈনিক ইত্তেফাক-এ বিশেষায়িত ও পূর্ণাঙ্গ কৃষিপাতা সম্পাদনা শুরু করেন। নব্বইয়ের দশক থেকে লিখে চলেছেন কৃষি ও গণমাধ্যম বিষয়ক নিবন্ধ। জাতীয় পর্যায়ে এ পর্যন্ত পুরস্কার পেয়েছেন অর্ধশতাধিক। পেয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পুরস্কার। শাইখ সিরাজ যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফাউন্ডেশনের একজন ফেলো। তিনি দেশের প্রথম ডিজিটাল স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আই' এর পরিচালক ও বার্তা প্ৰধান। শাইখ সিরাজের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের নিবন্ধ সংকলন "সান অব দ্য সয়েল”।