“বাংলাদেশে ইসলাম” বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ এবনে গােলাম সামাদ-এর ‘বাংলাদেশে ইসলাম নামক বই প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। বর্তমানে অনেকটাই সংশােধিত, পরিমার্জিত ও কিছু সংযােজন করে তা আবার প্রকাশ করা হলাে। বইটি আকারে ছােট হলেও এতে আছে যথেষ্ট চিন্তার খােরাক, আছে অনেককিছু খুঁজে পাবার আশ্রয়। কারণ বইটির ছােট দুই মলাটের মধ্যে এত তথ্য-উপাত্ত রয়েছে যে, যা আমাদের বিস্মিত না করেই পারে না। এই সূত্রগুলাে আমাদের পথ দেখায় সামনে আগাবার। একে বাংলাদেশে ইসলাম বা বাংলাদেশে মুসলমান বিষয়ে গবেষণার একটি গাইড লাইনও বলা চলে। এখানে লেখক ইসলামকে শুধু ধর্মীয় অর্থে ব্যবহার করেননি; ব্যবহার করেছেন একটা বিশেষ ধর্ম-বিশ্বাস হিসাবে; যে বিশ্বাসকে নির্ভর করে গড়ে উঠেছে একটি ইসলামী দুনিয়া ও তার সংস্কৃতি। এখানে বিশেষভাবে আলােচিত হয়েছে বাংলাদেশের মুসলমানের উদ্ভব-বৃত্তান্ত, বাঙালি মুসলমানের রাষ্ট্রচেতনা এবং বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতির পরিচয়। এই মুদ্রণে নতুন করে সংযােজিত হলাে ‘প্রাক-আর্য সংস্কৃতি' নামে একটি নতুন অধ্যায়। যা থেকে জানা যাবে বাংলাদেশের মানব পরিচয়ের আর একটি বিশেষ দিক সম্পর্কে। ‘বাংলাদেশে ইসলাম' গ্রন্থটি পাঠ করলে এবনে গােলাম সামাদকে হয়তাে নতুনভাবেই খুঁজে পাব। কারণ তাঁর রাষ্ট্র-চেতনা ও সমাজ-চেতনার বিশ্লেষণ, বিশেষ করে বাংলাদেশী মুসলমানের নৃ-জাতিক পরিচয় অর্থাৎ বাংলাদেশের মুসলমান ও তার সংস্কৃতির উদ্ভব বৃত্তান্তের ইতিহাস এর আগে এমন তথ্যনিষ্ঠ করে কেউ আলােচনা করেননি। আমাদের বিশ্বাস পাঠকও এখান থেকে খুঁজে পাবেন অনেককিছু, আর পাবেন ভালােলাগার আশ্রয়।
Abney Golam Samad ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৯ সালে রাজশাহীতে জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট প-িত, চিন্তাবিদ, বহুমাত্রিক লেখক এবং কলামিস্ট। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। পেশায় উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হলেও ইতিহাস ও শিল্পকলায় তিনি বিশেষ আগ্রহী। এ সব বিষয়ে তাঁর লেখালিখি রয়েছে যা মননশীল বক্তব্যে ঋদ্ধ। পরিণত বয়সে কলম ধরে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে ইতিহাসের অমূল্য উপাদান সংরক্ষণ কওে চলেছেন। ১৯৪৮-এ শিক্ষা সংঘ বিষ্ণুপুর থেকে বি. কোর্স পাশ করেন যা তখনকার মাধ্যমিক সমমান পাশ ছিলো। এরপর তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তেজগাঁও কৃষি ইনিস্টিটিউট থেকে কৃষিবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করার পওে তিনি বিলেতে পাড়ি জমান উদ্ভিদ রোগতত্ত্বের ওপরে গবেষণা করতে। ফ্রান্সে ৪ বছর গবেষণা করেন প্ল্যান্ট ভাইরাসের ওপরে। ১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এবনে গোলাম সামাদের পিতা মো.ইয়াসিন একজন স্টেশন মাস্টার ছিলেন। তাঁর মাতার নাম নছিরন নেসা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ের জনক। তিনি কলাম লেখক হিসেবে বাংলাদেশে সমাধিক পরিচিত। তিনি মূলত রাজনীতি-সমাজনীতি নিয়েই বেশি লিখতে পছন্দ করেন। ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং আমার দেশ পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক হিসেবে কাজ করেছেন অনেক দিন। তাঁর লেখায় মুক্তচিন্তার ছাপ লক্ষ করা যায়। তাঁর লেখায় গভীর ইতিহাসচেতনারও ছাপ রয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনৈতিক আনুগত্যেও অভাব তাঁর রচনাগুলোর বিশেষ আকর্ষণ। আছে এক ধরনের নৈর্ব্যক্তিকতা যা সচরাচর দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আত্মজৈবনিক রচনা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য: ‘শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী মনে হয়েছে একটি বহুগুণে গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এতে ধরা পড়েছে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে থাকা বামবুদ্ধিজীবীরা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে, পাকিস্তান আন্দোলনটা ছিল একটি সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। কিন্তু শেখ মুজিব তার জীবনীতে বলেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।’ কলাম লেখা ছাড়াও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ভিত্তিকপাঠ্য তালিকা এবং পাঠ্য তালিকার বাইরে তাঁর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত কিছু বইয়ের নাম উল্লেখ করা হলো: বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি, আত্মপক্ষ, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, বাংলাদেশ : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া, মানুষ ও তার শিল্পকলা, নৃ-তত্ত্বের প্রথমপাঠ, প্রাথমিক জীবাণুতত্ত্ব, বায়ান্ন থেকে একাত্তর, আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং আরাকান সংকট, ইসলামী শিল্পকলা, শিল্পকলার ইতিকথা, বাংলাদেশে ইসলাম ও ঐতিহ্য, বর্তমান বিশ্ব ও মার্কসবাদ, বাংলাদেশের মানুষ ও ঐতিহ্য, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, জীবাণুতত্ত্ব, উদ্ভিদ সমীক্ষা, নৃ-তত্ত্ব।