“বাংলাদেশ : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট এবনে গােলাম সামাদ আমাদের মাঝে আছেন দীর্ঘদিন। অবশ্য দিয়েছেন তার অধিক। এ ক্ষেত্রে কোন বিশেষণই তার জন্য যথেষ্ট হবে না। কারণ তিনি চিন্তাক্ষেত্রের সকল অঙ্গনেই তাঁর পদচিহ্ন রেখেছেন। আর যা রেখেছেন সফলভাবেই। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এবনে গােলাম সামাদকে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করলে অত্যুক্তি হবে না। কারণ তিনি লিখেননি এমন কোন বিষয় নেই। জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা শাখায় গভীর আকর্ষণ ছিল এবনে গােলাম সামাদের। শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে গভীর অধ্যায়ন করেছেন এবং এসব বিষয়ে লিখেছেন বহু প্রবন্ধ ও কলাম । তাকে অনেকেই বিবেচনা করে থাকেন জীবন্ত। জ্ঞানকোষ হিসেবে। তাঁর সর্বব্যাপক অধ্যায়ন, জ্ঞানের গভীরতা এবং সহজ ও বােধগম্য ভাবে তা উপস্থাপনের ঈর্ষণীয় ক্ষমতা মানুষকে বিস্মিত করে। এবনে গােলাম সামাদ যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের তথা চিন্তা-ক্ষেত্রের সকল শাখাতে সফল বিচরণ। করেছেন, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘বাংলাদেশ : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া নামক গ্রন্থ। গ্রন্থটি পাঠ করলে পাঠককে বিস্মিত হতে হয় লেখকের আলােচনার বিষয়গুলাে নিয়ে। এখানে আলােচিত হয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান ভিত্তিক দর্শনসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে। সবদিক বিবেচনায় এটি একটি যে আকর গ্রন্থ, এতে কোন সন্দেহ নেই। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে। এর অধিকাংশ প্রবন্ধ রচিত হয়েছে নব্বইয়ের দশক জুড়ে। সেই পুরাে দশককে বুঝতে ও জানতে গ্রন্থটি অনন্য। এর সাথে নতুন করে সংযােজন হলাে আরও কয়েকটি প্রবন্ধ। তাছাড়া লেখকের বিবেচনায় এটি তাঁর রচিত গ্রন্থগুলাের মধ্যে অন্যতম।
Abney Golam Samad ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৯ সালে রাজশাহীতে জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট প-িত, চিন্তাবিদ, বহুমাত্রিক লেখক এবং কলামিস্ট। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। পেশায় উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হলেও ইতিহাস ও শিল্পকলায় তিনি বিশেষ আগ্রহী। এ সব বিষয়ে তাঁর লেখালিখি রয়েছে যা মননশীল বক্তব্যে ঋদ্ধ। পরিণত বয়সে কলম ধরে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে ইতিহাসের অমূল্য উপাদান সংরক্ষণ কওে চলেছেন। ১৯৪৮-এ শিক্ষা সংঘ বিষ্ণুপুর থেকে বি. কোর্স পাশ করেন যা তখনকার মাধ্যমিক সমমান পাশ ছিলো। এরপর তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তেজগাঁও কৃষি ইনিস্টিটিউট থেকে কৃষিবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করার পওে তিনি বিলেতে পাড়ি জমান উদ্ভিদ রোগতত্ত্বের ওপরে গবেষণা করতে। ফ্রান্সে ৪ বছর গবেষণা করেন প্ল্যান্ট ভাইরাসের ওপরে। ১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এবনে গোলাম সামাদের পিতা মো.ইয়াসিন একজন স্টেশন মাস্টার ছিলেন। তাঁর মাতার নাম নছিরন নেসা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ের জনক। তিনি কলাম লেখক হিসেবে বাংলাদেশে সমাধিক পরিচিত। তিনি মূলত রাজনীতি-সমাজনীতি নিয়েই বেশি লিখতে পছন্দ করেন। ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং আমার দেশ পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক হিসেবে কাজ করেছেন অনেক দিন। তাঁর লেখায় মুক্তচিন্তার ছাপ লক্ষ করা যায়। তাঁর লেখায় গভীর ইতিহাসচেতনারও ছাপ রয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনৈতিক আনুগত্যেও অভাব তাঁর রচনাগুলোর বিশেষ আকর্ষণ। আছে এক ধরনের নৈর্ব্যক্তিকতা যা সচরাচর দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আত্মজৈবনিক রচনা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য: ‘শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী মনে হয়েছে একটি বহুগুণে গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এতে ধরা পড়েছে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে থাকা বামবুদ্ধিজীবীরা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে, পাকিস্তান আন্দোলনটা ছিল একটি সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। কিন্তু শেখ মুজিব তার জীবনীতে বলেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।’ কলাম লেখা ছাড়াও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ভিত্তিকপাঠ্য তালিকা এবং পাঠ্য তালিকার বাইরে তাঁর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত কিছু বইয়ের নাম উল্লেখ করা হলো: বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি, আত্মপক্ষ, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, বাংলাদেশ : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া, মানুষ ও তার শিল্পকলা, নৃ-তত্ত্বের প্রথমপাঠ, প্রাথমিক জীবাণুতত্ত্ব, বায়ান্ন থেকে একাত্তর, আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং আরাকান সংকট, ইসলামী শিল্পকলা, শিল্পকলার ইতিকথা, বাংলাদেশে ইসলাম ও ঐতিহ্য, বর্তমান বিশ্ব ও মার্কসবাদ, বাংলাদেশের মানুষ ও ঐতিহ্য, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, জীবাণুতত্ত্ব, উদ্ভিদ সমীক্ষা, নৃ-তত্ত্ব।