ধানমন্ডি ৩২ নম্বর। একটি সড়কের নাম। সেই সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটা নিয়ে শুরু করেছিলাম একটি উপন্যাস লেখা। ছােট্ট এই বাড়িটার ইতিহাস এতটাই বিশাল যে, একটা উপন্যাসে মলাটবদ্ধ করা সম্ভব হলাে না। কেননা, এই বাড়ির ইতিহাসের ভেতর বাঙালি জাতির ইতিহাস, বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস জড়িয়ে আছে; যা কোনােভাবেই আলাদা করা সম্ভব না। ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মূলত সময়। সময় যাকে ধারণ করে ইতিহাস তাকে আশ্রয় দেয়। সময় যাকে আড়াল করে সে হারিয়ে যায়। এই বাড়ির ইতিহাসকে ছয়টি ভাগে তখন ভাগ করেছিলাম। সেটাও সময়ের ওপর নির্ভর করে। প্রথম খণ্ড ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। দ্বিতীয় খণ্ড ‘ধানমান্ড ৩২ নম্বর গণঅভ্যুত্থান পর্ব'। এই খণ্ডে স্থান পেয়েছে ৬৬ থেকে ৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়। এই সময়ের ইতিহাস ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। তাই এই খণ্ডের উপজীব্য হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পেছনের কাহিনি ও এই মামলার বিচারের প্রেক্ষাপট এবং উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান । উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা। এই ঘটনা ইতিহাসের সত্য, অতীতের সত্য, দেশকালে লগ্ন সত্য, অর্থাৎ বাস্তব সত্য; যা কল্পনায় রূপ নেয়া নয়। তা ঘটে যাওয়া বাস্তব। এ রকম ঘটনা পূর্বাপর আর ঘটেনি। মহান এই গণঅভ্যুত্থানের বিশাল কর্মযজ্ঞের অভ্যন্তরে লুকিয়ে আছে রাজনীতির এক ঐশ্বর্য। তবে সে ঐশর্য অনেকটা চাপা পড়ে গেছে মহান স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিজয়ের আনন্দে। তাই এই ঘটনা বাঙালি জাতির মনে দীর্ঘ পরিসরে প্রবলভাবে স্থান পায়নি। এমনকি উঘাটন করার চেষ্টাও তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গণঅভ্যুত্থান পর্বে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা উঘটনের একটা চেষ্টা চালিয়েছি। এই বাস্তব অতীতের সাথে মিশ্রণ ঘটিয়েছি কল্পনার। শুধু অতীত থাকলে ইতিহাস হতাে, বাস্তব হতাে, কল্পনার মিশ্রণ না ঘটলে আর্ট হতাে না। উপন্যাস হতাে না। এটি উপন্যাস। তাই তথ্য-উপাত্ত অনেক বই-পুস্তক ও ব্যাক্তির কাছ থেকে নিয়েছি। তাই সেসব উল্লেখ করিনি। এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে কতটা সফল হয়েছি সে প্রশ্নের মুখে দাঁড়ানাে কঠিন। তবে এই বিষয়ের ওপরে দীর্ঘ পরিসরে একটা উপন্যাস দাঁড় করিয়েছি। আশাকরি সে পরিশ্রম একেবারে ব্যর্থ যায়নি। পাঠক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বিষয়ে পরিপূর্ণ একটা ধারণা লাভ করতে পারবেন। পাঠকের ভালােবাসায় বাঙালির এই সুপ্ত ইতিহাস আবার প্রাণ ফিরে পাবে এতটুকু বিশাস আছে। কেননা, আমরা হারিয়ে যেতে দেব না আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। এই ইতিহাস-ঐতিহ্য আমাদের সম্পদ। বাঙালির সম্পদ।
আমি শামস সাইদ। আশির দশকের মাঝামাঝি কোনাে এক বসন্তে পিরােজপুর জেলার, ভাণ্ডারিয়ায় আমার জন্ম হয়েছে । One bright book of life, এমন একটি উপন্যাস লেখার স্বপ্ন আমার । ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে ক্রুশবিদ্ধ কলম। ২০১৮ সালে ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ । জানি না কবে One bright book of life, এমন একটি উপন্যাস লিখতে পারব। তবে সারাজীবন চেষ্টা করে যাব। যেদিন এমন একটি উপন্যাস লিখতে পারব সেদিনের পর আর উপন্যাস লিখব না।