“বহুবর্ণ ভালোবাসা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ মায়া, আমাকে চিনতে পারছাে? ও প্রথমটায় শুনতে পায়নি। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, মায়া, আমাকে চিনতে পারছাে? সুস্মিতা বললাে, বাঃ, চিনতে পারবাে না কেন? বরং আপনিই আমাকে চিনতে পারছেন তাে? গত সপ্তাহে আমি আপনাকে ট্রামের জানালা দিয়ে ডাকলাম। আপনি সেদিন আমাকে দেখেও দেখতে পেলেন না। এবার আর মনে মনে নয়, এবার আমি বেশ জোরে বললাম, মায়া, আমাকে চিনতে পারছাে? সুস্মিতা আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঝলমলেভাবে হাসলাে। দু’এক পলক চোখাচোখি হলাে, সেই দু’এক পলকের মধ্যে অনেক কথা হয়ে গেল। অসিত মজুমদার আমার পাশেই বসে আছে। হাতে মাংসের টুকরাে, মুখটা আক্ষরিক অর্থে হাঁ। সে স্তম্ভিতভাবে আমাদের কথা শুনছে। আমি আর অসিত পাশাপাশি খেতে বসেছিলাম । আমরা দুজনেই ধুতি পাঞ্জাবি পরেছি, আজ অন্যদের চোখে আমাদের মিল আরও প্রকট। বিস্মিত অসিত তার হাতের মাংসের টুকরােটা প্লেটে নামিয়ে রাখলাে। সুস্মিতা ওর দিকে একবারও চোখ রাখেনি। অসিত নীরস গম্ভীরভাবে বললাে, সুস্মিতা, তােমার নাম আবার মায়া কবে থেকে হলাে? আমি বললাম, আপনি জানেন না? মায়া ওর ডাক নাম! সুস্মিতা অন্যদিকে চোখ রেখে উদাসীনভাবে বললাে, হ্যা, মায়া আমার ডাক নাম। অনেকদিন এই নামে কেউ ডাকেনি। সুস্মিতা আমাকে বললাে, আপনি খেয়ে নিন। আপনার সঙ্গে কথা আছে। তুমি কোথায় থাকবে? তােমাকে কোথায় খুঁজে পাব? আমি আপনাকে খুঁজে নেব।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।