b"ভারত প্রসঙ্গে" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:br/b “ভারত প্রসঙ্গে” গ্রন্থে বদরুদ্দীন উমর বিশেষত ভারতে বর্তমান রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে আলােচনা করেছেন। এ আলােচনায় কীভাবে ভারতের। ইতিহাস বিকৃতি এবং ইতিহাসের অভাব ও বােধহীনতার সাথে ভারতের বৃহৎ পুঁজির স্বার্থ যুক্ত হয়ে কতকগুলি ঢাল তৈরি করেছে তা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এসব চালের মধ্যে অন্যতম সাম্প্রদায়িকতা, সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানাের অন্যতম অস্ত্র গরু রাজনীতি। কংগ্রেসের এবং গান্ধীর প্রশ্রয়ে যে কংগ্রেস ধর্মবিযুক্ত দল ছিল সে কংগ্রেস ৩০ এর দশক থেকে ক্রমে সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে থাকে । সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে ঐক্যের প্রতীক ঘােষণা করে গুজরাটের কেউরিয়াতে ২৯৯০ কোটি টাকা খরচ করে ৫৯৭ ফুট উচ্চ statue of unity উদ্বোধন করেন মােদি। কংগ্রেস হিন্দুত্ববাদী বা সাম্প্রদায়িক দল না হলেও সেখানে আরএসএস পন্থী লােক ছিল । আরএসএস একটি হিন্দুত্ববাদী দল । আরএসএসকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাকে সাংস্কৃতিক দল হিসেবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত করেন প্যাটেল । হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের ইতিহাসকে চরমভাবে বিকৃত করেছে। তারা মুসলিমদের বিদেশাগত ঘােষণা দিয়েছে । আসাম থেকে ৪০ লাখ মুসলিম বিতাড়নের উদ্যোগ নিয়েছে। গরু খাওয়া এবং বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আগে সবাই হিন্দু ছিল, কাজেই পুনরায় তাদের হিন্দু হতে হবে – এভাবে তারা মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টানকে ঘর ওয়াপসি নীতির আওতায় ধর্মান্তর করছে। দলিতদের সম্পত্তির এবং সামাজিকতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
বদরুদ্দীন উমরের জন্ম ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিম বাঙলার বর্ধমান শহরে। মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, রাজনীতিবিদ, প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ হিসেবে তিনি বাঙলাদেশে সুপরিচিত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. পাশ করার আগেই ১৯৫৪ সালে দর্শন বিভাগে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে এম. এ. পাশ করার পর ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এই তিন বিষয়ে অনার্স ডিগ্ৰী অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগেরও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। ষাটের দশকে প্রকাশিত তাঁর তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) তত্ত্বকালে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময় পাকিস্তান সরকারের সাথে তাঁর বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং তিনি নিজেই ১৯৬৮ সালে অধ্যাপনার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।