বাংলা সাহিত্যে মাঝেমধ্যে True Crime genre নিয়ে কোন কোন লেখক বিচ্ছিন্ন কাজ করলেও সেভাবে মাতামাতি কোনোদিন হয়নি। বাংলায় বরাবর কাল্পনিক অপরাধকাহিনীই বেশি পাঠকের মন কেড়ে থাকে। বরং ইদানীং কালে টেলিভিশন বা অন্যান্য অডিও ভিশ্যুয়াল মাধ্যমে True Crime বেশি নজর কাড়ছে। বিশ্বসাহিত্যে কিন্তু Literature এর এই বিশেষ ধারা True Crime যথেষ্ট জনপ্রিয়। এই ধরণের লেখায় লেখক অতীতে ঘটে যাওয়া অপরাধের কোন সত্যঘটনাকে কাহিনী আকারে পেশ করেন, এবং তার পটভূমি, অপরাধীর মনস্ত্বত্ব এবং তার কার্যকলাপকে নাট্যাকারে বর্ণনা করে থাকেন, যাতে করে রচনাটি পাঠকের মনে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর হিসেবে ধরা দেয়। বিশ্বসাহিত্যে True Crime –এর ইতিহাস বেশ পুরনো। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেনের সিংহাসনে যখন ষষ্ঠ এডওয়ার্ড, সেইসময় তৎকালীন সময়ে ঘটা নৃশংস নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডগুলোকে কাহিনী আকারে লিখে প্যামফ্লেট হিসেবে প্রকাশ করা হত। কিনতেন মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তেরা। অপরাধীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা এই প্যামফ্লেটগুলো সমাজে অপরাধ বাড়াতে পারে, এই বিতর্ক সমান্তরালে চললেও এই প্যামফ্লেটগুলোর চাহিদা ছিল প্রায় আকাশছোঁয়া, প্রকাশ হয়েছিল প্রায় উনিশ শতক পর্যন্ত। উইলিয়াম রকহিড নামে সেইসময় এক দুঁদে আইনজীবী ছিলেন, তিনি অবশ্য ইংল্যান্ডের নন, ভদ্রলোক ছিলেন স্কটিশ। তিনি ১৮৮৯ সাল থেকে প্রায় ছয় দশক টানা তৎকালীন সাড়াজাগানো মামলাগুলো নিয়ে লিখেছিলেন Classic Crimes এ। আর কয়েকবছর পর এগিয়ে এল আমেরিকানরাও। এডমুন্ড পিয়ারসন লিখলেন Studies in Murder এর মত বিখ্যাত কয়েকটি রচনা। এইভাবে এদিক ওদিক কিছু বিচ্ছিন্ন লেখা হলেও আধুনিক সাহিত্যে True Crime genre কে দিশা দেখালেন ট্রুম্যান ক্যাপোটে। Truth is stranger than fiction এই প্রবাদকে সত্যি করে দিলেন তিনি। সত্যঘটনা দিয়েও যে শিরদাঁড়া কাঁপানো উপন্যাস লেখা যায়, তা তিনি দেখালেন তাঁর ১৯৬৫ সালে লেখা Cold Blood উপন্যাসে। এইভাবেই নন-ফিকশনের এই ধারা পাঠকমনে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছিল। কিন্তু যতই পাঠকের কাছে মনোলোভা হোক, এই genre বরাবরই একশ্রেণীর মানুষের কাছে ঋণাত্মক ভাবমূর্তি নিয়ে অবস্থান করেছে। Jack Miles এর মত সাহিত্যিকও একাধিকবার বলেছেন এই ধরণের লেখা সমাজে অপরাধী বাড়ায়, শুধু তাই নয় সাধারনের মানুষের মনেও ভীতি ও হতাশার সঞ্চার করে। আগেই বলেছি, সংখ্যায় কম হলেও বাংলাতেও এই নিয়ে কাজ হয়েছে। লিখেছেন শ্রীপান্থ, চিরঞ্জীব সেনের মত শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিকরা। সেই ধারা অনুসরণ করেই আমি এই গ্রন্থে সত্যঘটনার ওপর ভিত্তি করে কল্পনার তুলিতে লিপিবদ্ধ করেছি বারোটি হত্যাকাণ্ড। এই বারোটি হত্যাকাণ্ডের বৈশিষ্ট্য এই যে, তারা প্রত্যেকে অপরের চেয়ে স্বতন্ত্র। কোন হত্যা মামলা দেড়শ বছরের পুরনো, কোনটি আশি বছরের, কোনটি বা পঞ্চাশ। কোনটিতে ধরা পড়েছে ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের দেশীয় মহারাজাদের বিলাসী অত্যাচারী মনোভাব, কোনটায় আবার তখনকার নারীদের অবস্থা। সেইসময়ের সমাজব্যবস্থা, সাধারণ মানুষ ও মামলার বিবরণ আমি যতটা সম্ভব বিশদে ও তথ্য আহরণ করে লেখার চেষ্টা করেছি। এই তথ্যসংগ্রহের জন্য আমি আন্তরিকভাবে ঋণী শ্রী শান্তনু ঘোষ, শ্রী সৌমেন পাল এবং কলকাতায় স্থিত ন্যাশনাল লাইব্রেরীর Archives Department এর কাছে। গ্রন্থের প্রয়োজনে বিভিন্ন ফোটোগ্রাফ দেওয়া হয়েছে তার বেশীরভাগই নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন লাইব্রেরীর রিপোজিটরি থেকে। এটি আমার প্রথম লেখা নন-ফিকশন, তাই সাগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম পাঠকের প্রতিক্রিয়ার জন্য।
এই ২৭ বছর বয়সেই তিনি বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যিক। এর মধ্যেই পুরস্কৃত হয়েছেন বাংলাদেশ, রাজ্য সরকারের তরফে। পেয়েছেন ‘বুক ফার্ম সেরা সাহিত্য সম্মান ২০১৮, Literary Star of Bengal Award, ২০১৮। দেবারতি মুখোপাধ্যায় আদতে ডানকুনির মেয়ে। সরকারী কলেজ থেকে পাশ করেন ইঞ্জিনিয়ারিং, তারপর ফিন্যান্সে MBA। প্রথমে কিছুদিন আমেরিকান আইটি কোম্পানিতে চাকরি করেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। তারপর একে একে পেয়েছেন দশের কাছাকাছি সরকারী চাকরি। চারবছর রাস্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন। সম্প্রতি রাজ্য সরকারে জয়েন করেছেন WBCS Officer হিসেবে। ২০১৬ সালের শেষদিকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ঈশ্বর যখন বন্দী’। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি করে আলোড়ন। একবছরের মাথায় শেষ হয় চারটি মুদ্রণ। রাজ্য সরকারের তরফে মালদা জেলাপরিষদ তাঁর ‘বাবা’ গল্পটিকে ‘বছরের সেরা ছোটগল্প ২০১৬’ সম্মাননায় ভূষিত করে। এরপর প্রকাশিত হয় একে একে উপন্যাস ‘নরক সংকেত’, গল্প সংকলন ‘ঝিঁঝিঁ পোকার মালা’, গল্প সংকলন ’১৫ ফোঁটা বৃষ্টিতে।’ প্রতিটিই সাদরে গৃহীত হয় পাঠকমহলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈজ্ঞানিক থ্রিলার উপন্যাস ‘নরক সংকেত’ প্রকাশের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় ৫০০০ কপি নিঃশেষিত হয়ে জিতে নেয় ‘২০১৭ এর সর্বাধিক বিক্রিত থ্রিলার’ এর তকমা। একে একে প্রকাশিত হয় ‘থ্রি’, ‘প্রহেলিকা’র মত আরো কিছু সংকলন। দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখার বৈশিষ্ট্য হল অভিনব প্লটের সঙ্গে পড়াশুনোসমৃদ্ধ টানটান লেখনী, যা নজর কেড়েছে বাংলা সাহিত্যমহলের, সমালোচকবৃন্দের। বাংলা বাজারের এই মন্দার সময়েও তাঁর পাঠকসংখ্যা রীতিমত ঈর্ষণীয়। অতিনব্য যুগের যে তরুণী সারাদিন মগ্ন মোবাইলে, তিনিই বইমেলায় ছোটেন দেবারতির বই কিনতে। এমনই ঝকঝকে মুগ্ধতা তাঁর লেখায়। রাজ্যসরকারী গুরুত্বপূর্ণ আমলার পদ সামলে তিনি সমান্তরালে লিখে চলেছেন নবকল্লোল, শুকতারার মত পত্রিকাতেও। তাঁর আসন্ন উপন্যাস ‘অঘোরে ঘুমিয়ে শিব’ এর ট্রেলার ইতিমধ্যেই দেখেছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ফেসবুকে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা লক্ষ ছুঁইছুঁই। সেখানেও তিনি নিয়মিত লেখেন তথ্যসমৃদ্ধ থ্রিলার, অদ্ভুত সমস্ত সিরিজ। তাঁর ছোটগল্প নিয়ে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্রও।