পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম স্থাপত্য, মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের অনন্যসুন্দর কীর্তি তাজমহল। পরলোকগতা স্ত্রী মুমতাজ বেগমের উদ্দেশ্যে বানানো শাহ জাহানের তাজমহল আজও আগ্রানগরী তথা ভারতবর্ষের এক মুখ্য আকর্ষণ। মুকুটের রত্নের মত শুভ্রধবল তাজ আর তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা যমুনা নদী একছড়া মুক্তোরমালার মত এঁকে বেঁকে গোটা নগরীকে যেন সাপের মত বেঁধে রেখেছে। উর্দু কবি থেকে বাঙালি সাধক, যুগে যুগে কে না তাজমহলের জয়গান গেয়ে গেছেন! কিন্তু মুদ্রার অন্য পিঠের মতই তাজমহলের আনাচে কানাচে আজও কান পাতলে শোনা যায় অন্য এক ইতিহাসের গল্প। সত্যিই কি তাজমহল মুঘল সম্রাটেরই বানানো? নাকি কিছু ইতিহাসবিদের বক্তব্য অনুযায়ী এটি আটশো বছর আগের এক সুপ্রাচীন শিবমন্দির! এই বিতর্কের পেছনে কতটা সুস্পষ্ট প্রমাণ আর কতটা অন্ধ আবেগ? কতটা ইতিহাস আর কতটা জোর করে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা? প্রমাণসর্বস্ব ইতিহাস যেখানে অস্পষ্ট হয়ে যায়, সেখানে সুযোগ বুঝে কড়া রাশ নেয় ধর্ম। মুমতাজের স্মৃতিসৌধ নাকি হিন্দুমন্দির এই তরজায় শুরু হয় দেশজুড়ে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক চাপান উতোর। আর এই অন্তর্ঘাতে ইন্ধনপ্রদানকারীদের উদ্দেশ্যও কি দাঙ্গার সাথে সাথে সফল হতে থাকে? ‘অঘোরে ঘুমিয়ে শিব’ বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপটে এক গবেষণাধর্মী উপন্যাস, যার পরতে পরতে রুদ্ধশ্বাস রহস্য জড়িয়ে থাকলেও সমাজের একদম অভ্যন্তরে প্রোথিত থাকা ফাটলগুলো চোখে ধরা দেয় অবলীলাক্রমে। আগ্রা থেকে মেঘালয়, দিল্লী থেকে খাজুরাহো, সুবিশাল ভৌগোলিক পটে এই সুদীর্ঘ উপন্যাসে আঁকা হয়েছে ইতিহাস ও ধর্মের অদ্ভুত মেলবন্ধন।
এই ২৭ বছর বয়সেই তিনি বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যিক। এর মধ্যেই পুরস্কৃত হয়েছেন বাংলাদেশ, রাজ্য সরকারের তরফে। পেয়েছেন ‘বুক ফার্ম সেরা সাহিত্য সম্মান ২০১৮, Literary Star of Bengal Award, ২০১৮। দেবারতি মুখোপাধ্যায় আদতে ডানকুনির মেয়ে। সরকারী কলেজ থেকে পাশ করেন ইঞ্জিনিয়ারিং, তারপর ফিন্যান্সে MBA। প্রথমে কিছুদিন আমেরিকান আইটি কোম্পানিতে চাকরি করেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। তারপর একে একে পেয়েছেন দশের কাছাকাছি সরকারী চাকরি। চারবছর রাস্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন। সম্প্রতি রাজ্য সরকারে জয়েন করেছেন WBCS Officer হিসেবে। ২০১৬ সালের শেষদিকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ঈশ্বর যখন বন্দী’। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি করে আলোড়ন। একবছরের মাথায় শেষ হয় চারটি মুদ্রণ। রাজ্য সরকারের তরফে মালদা জেলাপরিষদ তাঁর ‘বাবা’ গল্পটিকে ‘বছরের সেরা ছোটগল্প ২০১৬’ সম্মাননায় ভূষিত করে। এরপর প্রকাশিত হয় একে একে উপন্যাস ‘নরক সংকেত’, গল্প সংকলন ‘ঝিঁঝিঁ পোকার মালা’, গল্প সংকলন ’১৫ ফোঁটা বৃষ্টিতে।’ প্রতিটিই সাদরে গৃহীত হয় পাঠকমহলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈজ্ঞানিক থ্রিলার উপন্যাস ‘নরক সংকেত’ প্রকাশের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় ৫০০০ কপি নিঃশেষিত হয়ে জিতে নেয় ‘২০১৭ এর সর্বাধিক বিক্রিত থ্রিলার’ এর তকমা। একে একে প্রকাশিত হয় ‘থ্রি’, ‘প্রহেলিকা’র মত আরো কিছু সংকলন। দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখার বৈশিষ্ট্য হল অভিনব প্লটের সঙ্গে পড়াশুনোসমৃদ্ধ টানটান লেখনী, যা নজর কেড়েছে বাংলা সাহিত্যমহলের, সমালোচকবৃন্দের। বাংলা বাজারের এই মন্দার সময়েও তাঁর পাঠকসংখ্যা রীতিমত ঈর্ষণীয়। অতিনব্য যুগের যে তরুণী সারাদিন মগ্ন মোবাইলে, তিনিই বইমেলায় ছোটেন দেবারতির বই কিনতে। এমনই ঝকঝকে মুগ্ধতা তাঁর লেখায়। রাজ্যসরকারী গুরুত্বপূর্ণ আমলার পদ সামলে তিনি সমান্তরালে লিখে চলেছেন নবকল্লোল, শুকতারার মত পত্রিকাতেও। তাঁর আসন্ন উপন্যাস ‘অঘোরে ঘুমিয়ে শিব’ এর ট্রেলার ইতিমধ্যেই দেখেছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ফেসবুকে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা লক্ষ ছুঁইছুঁই। সেখানেও তিনি নিয়মিত লেখেন তথ্যসমৃদ্ধ থ্রিলার, অদ্ভুত সমস্ত সিরিজ। তাঁর ছোটগল্প নিয়ে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্রও।