রুদ্রাণী ও প্রিয়ম, সদ্যবিবাহিত দম্পতি। অফিস বাড়ি মিলিয়ে এই দুই তরুণ তরুণীর জীবন কাটছিল স্বপ্নের মত। কিন্তু এই নিস্তরঙ্গ জীবনে ঢেউ উঠল যখন রুদ্র কর্মসুবাদে এক জমিদার বাড়িতে গিয়ে আবিষ্কার করলো এক রহস্যময় চিত্র – ধ্যানরত সন্ন্যাসী , সাথে এক বিচিত্র দর্শন কুণ্ডলী পাকানো প্রাণী। ড্রাগন? রুদ্রর বাবা প্রখ্যাত আরকিওলজিস্ট ডঃ সুরঞ্জন সিংহরায় নিখোঁজ হয়েছিলেন প্রায় আট বছর আগে। কোনো কি সম্পর্ক আছে এই জমিদার বাড়ির সঙ্গে রুদ্রর বাবার অন্তর্ধানের? শুরু হল অদৃষ্টের সঙ্গে লুকোচুরি। কলকাতা, শহরতলি, সুদূর ভুটান মিলিয়ে ঘটে চলল একের পর এক রোমহর্ষক ঘটনা। বাবাকে নতুন করে খুঁজতে গিয়ে রুদ্রর সামনে উন্মোচিত হতে লাগলো একের পর এক অদ্ভুত হাড় হিম করা সত্য। আভাষ মিলল বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের কিছু অজানা রহস্যের ওপারে লুকিয়ে থাকা এমন এক অবিশ্বাস্য সত্যের যা অশুভ লোকের হাতে পড়লে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সমগ্র মানবজাতি, তছনছ হয়ে যেতে পারে সভ্যতা। সত্যিই কি বন্দী করা যায় ঈশ্বরকে? রুদ্র কি পারবে খুঁজে বের করে তার বাবাকে? ইতিহাস, বিজ্ঞান ও পুরণের মেলবন্ধনে এগনো রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চে ভরপুর এই অতিপ্রাকৃত থ্রিলার উপন্যাস ‘ঈশ্বর যখন বন্দী’ ২০১৬ সালে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া ফেলেছিল পাঠক মহলে, রাতারাতি হয়ে উঠেছিল’ বেষ্ট সেলার’, এক বছরে নিঃশেষিত হয়েছিল চারটি সংস্করণের সমস্ত কপি। এই নতুন রূপ ‘ঈশ্বর যখন বন্দী’র পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত প্রয়াস।
এই ২৭ বছর বয়সেই তিনি বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যিক। এর মধ্যেই পুরস্কৃত হয়েছেন বাংলাদেশ, রাজ্য সরকারের তরফে। পেয়েছেন ‘বুক ফার্ম সেরা সাহিত্য সম্মান ২০১৮, Literary Star of Bengal Award, ২০১৮। দেবারতি মুখোপাধ্যায় আদতে ডানকুনির মেয়ে। সরকারী কলেজ থেকে পাশ করেন ইঞ্জিনিয়ারিং, তারপর ফিন্যান্সে MBA। প্রথমে কিছুদিন আমেরিকান আইটি কোম্পানিতে চাকরি করেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। তারপর একে একে পেয়েছেন দশের কাছাকাছি সরকারী চাকরি। চারবছর রাস্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন। সম্প্রতি রাজ্য সরকারে জয়েন করেছেন WBCS Officer হিসেবে। ২০১৬ সালের শেষদিকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ঈশ্বর যখন বন্দী’। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি করে আলোড়ন। একবছরের মাথায় শেষ হয় চারটি মুদ্রণ। রাজ্য সরকারের তরফে মালদা জেলাপরিষদ তাঁর ‘বাবা’ গল্পটিকে ‘বছরের সেরা ছোটগল্প ২০১৬’ সম্মাননায় ভূষিত করে। এরপর প্রকাশিত হয় একে একে উপন্যাস ‘নরক সংকেত’, গল্প সংকলন ‘ঝিঁঝিঁ পোকার মালা’, গল্প সংকলন ’১৫ ফোঁটা বৃষ্টিতে।’ প্রতিটিই সাদরে গৃহীত হয় পাঠকমহলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈজ্ঞানিক থ্রিলার উপন্যাস ‘নরক সংকেত’ প্রকাশের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় ৫০০০ কপি নিঃশেষিত হয়ে জিতে নেয় ‘২০১৭ এর সর্বাধিক বিক্রিত থ্রিলার’ এর তকমা। একে একে প্রকাশিত হয় ‘থ্রি’, ‘প্রহেলিকা’র মত আরো কিছু সংকলন। দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখার বৈশিষ্ট্য হল অভিনব প্লটের সঙ্গে পড়াশুনোসমৃদ্ধ টানটান লেখনী, যা নজর কেড়েছে বাংলা সাহিত্যমহলের, সমালোচকবৃন্দের। বাংলা বাজারের এই মন্দার সময়েও তাঁর পাঠকসংখ্যা রীতিমত ঈর্ষণীয়। অতিনব্য যুগের যে তরুণী সারাদিন মগ্ন মোবাইলে, তিনিই বইমেলায় ছোটেন দেবারতির বই কিনতে। এমনই ঝকঝকে মুগ্ধতা তাঁর লেখায়। রাজ্যসরকারী গুরুত্বপূর্ণ আমলার পদ সামলে তিনি সমান্তরালে লিখে চলেছেন নবকল্লোল, শুকতারার মত পত্রিকাতেও। তাঁর আসন্ন উপন্যাস ‘অঘোরে ঘুমিয়ে শিব’ এর ট্রেলার ইতিমধ্যেই দেখেছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ফেসবুকে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা লক্ষ ছুঁইছুঁই। সেখানেও তিনি নিয়মিত লেখেন তথ্যসমৃদ্ধ থ্রিলার, অদ্ভুত সমস্ত সিরিজ। তাঁর ছোটগল্প নিয়ে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্রও।