ইতিহাসে মানুষের রূপান্তর ও স্বরূপ লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। যে কোনো মানুষ নিজের উৎস, প্রবহমান ধারা ও গন্তব্য নির্ণয় করতে পারে ইতিহাস অধ্যয়ন করে। তাই মানুষের উত্তরাধিকার ও বিকাশধারার সন্ধান ইতিহাসে প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রত্যেক জাতির মতো বাঙালি জাতির আছে একটি ইতিহাস। তবে সেই ইতিহাস নিয়ে আছে নানা বিতর্ক। অন্যদিকে বাঙালি মুসলমানের জাতিসত্তার স্বরূপ ও বিবর্তন ইতিহাসে স্পষ্ট আকারে নেই। ফলে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছেও আমাদের উৎস ও রূপান্তর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই। অথচ আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। ‘আত্মপরিচয়ের সন্ধানে’ গ্রন্থে আমাদের জাতিসত্তার স্বরূপ, বিকাশধারা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির রূপান্তর, জাতীয়তাবাদ, রাষ্ট্রচিন্তা, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বিবর্তন সম্পর্কে একটি পরিস্কার ধারণা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন এই সময়ের অন্যতম পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট এবনে গোলাম সামাদ। ইতিহাসের বাঁকে বহুদিনের জমে থাকা অস্পষ্টতা দূর করে একটি জাতির ক্রমধারা ও শেকড় সন্ধান করার মতো দুঃসাহসী, শ্রমলব্ধ ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন লেখক। আমরা চাই এই বইটির মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম সঠিক তথ্য ও ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠুক এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হোক। বাজারে বইটির দুষ্প্রাপ্যতা ও চাহিদার আলোকে পরিলেখ প্রকাশনী নতুনভাবে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান সংস্করণে লেখক তথ্য, উপাত্ত, বক্তব্যসহ সার্বিক দিক থেকে বইটির সংযোজন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করেছেন। আমরা বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
Abney Golam Samad ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৯ সালে রাজশাহীতে জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট প-িত, চিন্তাবিদ, বহুমাত্রিক লেখক এবং কলামিস্ট। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। পেশায় উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হলেও ইতিহাস ও শিল্পকলায় তিনি বিশেষ আগ্রহী। এ সব বিষয়ে তাঁর লেখালিখি রয়েছে যা মননশীল বক্তব্যে ঋদ্ধ। পরিণত বয়সে কলম ধরে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে ইতিহাসের অমূল্য উপাদান সংরক্ষণ কওে চলেছেন। ১৯৪৮-এ শিক্ষা সংঘ বিষ্ণুপুর থেকে বি. কোর্স পাশ করেন যা তখনকার মাধ্যমিক সমমান পাশ ছিলো। এরপর তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তেজগাঁও কৃষি ইনিস্টিটিউট থেকে কৃষিবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করার পওে তিনি বিলেতে পাড়ি জমান উদ্ভিদ রোগতত্ত্বের ওপরে গবেষণা করতে। ফ্রান্সে ৪ বছর গবেষণা করেন প্ল্যান্ট ভাইরাসের ওপরে। ১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এবনে গোলাম সামাদের পিতা মো.ইয়াসিন একজন স্টেশন মাস্টার ছিলেন। তাঁর মাতার নাম নছিরন নেসা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ের জনক। তিনি কলাম লেখক হিসেবে বাংলাদেশে সমাধিক পরিচিত। তিনি মূলত রাজনীতি-সমাজনীতি নিয়েই বেশি লিখতে পছন্দ করেন। ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং আমার দেশ পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক হিসেবে কাজ করেছেন অনেক দিন। তাঁর লেখায় মুক্তচিন্তার ছাপ লক্ষ করা যায়। তাঁর লেখায় গভীর ইতিহাসচেতনারও ছাপ রয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনৈতিক আনুগত্যেও অভাব তাঁর রচনাগুলোর বিশেষ আকর্ষণ। আছে এক ধরনের নৈর্ব্যক্তিকতা যা সচরাচর দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আত্মজৈবনিক রচনা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য: ‘শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী মনে হয়েছে একটি বহুগুণে গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এতে ধরা পড়েছে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে থাকা বামবুদ্ধিজীবীরা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে, পাকিস্তান আন্দোলনটা ছিল একটি সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। কিন্তু শেখ মুজিব তার জীবনীতে বলেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।’ কলাম লেখা ছাড়াও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ভিত্তিকপাঠ্য তালিকা এবং পাঠ্য তালিকার বাইরে তাঁর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত কিছু বইয়ের নাম উল্লেখ করা হলো: বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি, আত্মপক্ষ, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, বাংলাদেশ : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া, মানুষ ও তার শিল্পকলা, নৃ-তত্ত্বের প্রথমপাঠ, প্রাথমিক জীবাণুতত্ত্ব, বায়ান্ন থেকে একাত্তর, আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং আরাকান সংকট, ইসলামী শিল্পকলা, শিল্পকলার ইতিকথা, বাংলাদেশে ইসলাম ও ঐতিহ্য, বর্তমান বিশ্ব ও মার্কসবাদ, বাংলাদেশের মানুষ ও ঐতিহ্য, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, জীবাণুতত্ত্ব, উদ্ভিদ সমীক্ষা, নৃ-তত্ত্ব।