পৃথিবীর ইতিহাস যুদ্ধ-বিগ্রহে পূর্ণ। মানুষ নিজেকে বাঁচানাের জন্য যতটা রক্ত ঝরিয়েছে তার চাইতে বেশি রক্ত ঝরিয়েছে নিজেদের ঈশ্বরকে বাঁচানাের জন্য। এই যুদ্ধ এখনও চলছে।br অন্যদিকে, বিজ্ঞানের দার্শনিকগণ মানুষকে এখন এমন একটা পর্যায়ে এনে ঝুলিয়ে রেখেছে, যেখানে না আছে। মানুষের পূর্ণাঙ্গ কোনাে ব্যাখ্যা, না আছে ঈশ্বর নামে কোন দৈবশক্তির অস্তিত্ব। কোয়ার্ক নামের অতি আশ্চর্য এক জড় কণা দিয়ে তৈরি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। একটা মানুষের দেহ এবং একটা পাথুরে দেয়ালের মধ্যে উপাদানগত কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য যেটুকু আছে তা কেবল সংখ্যা এবং বিন্যাসগত। যদি তাই হয়, তবে জাবের আলী কেন একজন উগ্র ধর্মযােদ্ধা? কেন তাঁর পৌত্র মিথুন পৃথিবীর যাবতীয় প্রত্নস্থল এবং প্রাচীন সভ্যতার মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে মারদুক, জিউস, আরাস, হােরাস, নিনুতা, অররু তথা যাবতীয় দেবদেবীর ছবি ও রেপ্লিকা সংগ্রহ করে 'Museum of God' তৈরি করতে চায়? পৌত্র মিথুনের সঙ্গে জাবের আলী সাহেবের এই সংঘাতের কারণ কি? নিঃসন্দেহে, এটা একটা যুদ্ধ দিনের গল্প। কিন্তু এতে বস্তুগত যুদ্ধের বিবরণ যতটা না আছে, তার চেয়ে বেশি আছে ওদের ভেতরকার চিন্তার সূত্র ধরে পথ চলা এবং আপাদমস্তক বিপরীত সমান্তরালে দাঁড়িয়ে থাকা একফালি তমসাচ্ছন্ন বােধের জগতে প্রজ্ঞা ও ভালােবাসার আলাে ফেলার প্রয়াস। এটা আসলে এমন একটা গল্প যার শেষ বলে কিছু নেই। তুমি যত বেশি পাঠ করবে তত ভালাে ভাবে বুঝতে পারবে, তুমি আসলে কিছুই জানাে না। বিজ্ঞানের দার্শনিকগণ বৃহৎ বিস্ফোরণ তত্ত্বের মাধ্যমে তােমাকে দুই হাজার কোটি বছর আগের ইতিহাস শুনিয়ে আপাতত বিশ্রামে আছেন। শুধু দুই হাজার কেন, তারা যদি তােমাকে আরও হাজার হাজার মিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগের ইতিহাস পাঠ করে শােনায় তবুও তুমি মন থেকে কোন তৃপ্তি পাবে না। কেননা, একজন স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে। তুমি প্রতিনিয়তই তােমার ভেতরগত প্রজ্ঞা দ্বারা তাড়িত হবে এবং অনিবার্য কারণেই জানতে চাইবে, "what next? এরপর কি?"
জন্ম: ১৫ই পৌষ মধ্যরাত্রি; পৃথিবীর যেকোনো নামিদামী শহর হতে অন্তত কয়েকশ মাইল দূরে, অতলান্ত এক হাওর-জনপদের আদিম ও অকৃত্তিম কৃষক পরিবারে। ঢাকায় আগমণ: ২০০৬ সালে। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ হতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এখন এমফিল গবেষণা ও শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগে Bangladesh Studies: History & Culture শাস্ত্রের লেকচারার। ২০১৩ সালে বেশ কয়েকটি সাহিত্য সাময়িকী এবং জাতীয় দৈনিকে গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাহিত্য জগতে পদার্পণ। শিক্ষানবিশ চলচ্চিত্রকার এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন ঘাসফড়িং, জাজ মাল্টিমিডিয়া সহ আরও কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে। প্রথম উপন্যাস, “ঝড় ও জনৈক চিন্তাবিদ" প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। প্রথম উপন্যাসের মাধ্যমেই লেখক এদেশের বিদগ্ধ ও বলিষ্ঠ পাঠক মহলের দৃষ্টি ফেরাতে সক্ষম হন। সাহিত্যে শক্তিমান এক কথাশিল্পীর অবশ্যম্ভাবী আগমনী-বার্তা ঘোষিত হয়। ঐতিহাসিক পটভূমিতে লেখা তাঁর দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস "অগ্নিপুরাণ" পাঠকের ভালোবাসায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ সালের অন্যতম বেস্টসেলার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। অগ্নিপুরাণ-এর ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় কলকাতার খোয়াবনামা থেকে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বইটি বিপুল আগ্রহ ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রেম ও যুদ্ধদিনের গল্পকার মুহম্মদ নিজাম পুরনো এবং দুষ্প্রাপ্য বই, পুঁথি, গান, কেচ্ছা ও কিংবদন্তী সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন। অবসরে ভালোবাসেন প্রিয়তম মানুষদের সঙ্গে আড্ডা, বই এবং বৃক্ষের সান্নিধ্য।