আমি জীবন, নষ্ট জীবন- কোটি মানুষের পদভারে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত এক মহানগরীতে জন্ম আমার। পুরনো ও পরিত্যক্ত অসমাপ্ত দুর্গের মতো দেখতে একটা সাড়ে তিনতলা ভবনের নিচতলায় আমার বসবাস। নিয়তির নির্মম পরিহাসে এমন এক ভূ-রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতার বৃন্তে আমার জন্ম হয়েছে যেখানে সুরের চাইতে অসুরের সংখ্যা ছিল বেশি আর যার দরুন নিজেকে আমি জন্ম মাত্রই আবিষ্কার করেছি পচাডোবা নর্দমার ভেতর মৃত শ্যাওলা আর দুর্বাসা লতাপাতার ঘেরে আটকে থাকা একটা বিপন্ন নক্ষত্রের রূপে। জ্ঞান হবার পর থেকেই আমি তাই মেরুদণ্ডহীন পিতার গ্লানিময় উত্তরাধিকার, উগ্র ও অবাঞ্চিত বড়চাচার দুঃশাসন এবং ছদরুলের মতো মহামূর্খদের অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের বিপরীতে নিজেকে তৈরি করছিলাম, জীবনে খুব বড় কিছু করে দেখানোর জন্যে। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত যাবতীয় সীমাবদ্ধতার বাঁধন ছিন্ন করে সুমহান জ্ঞান ও শিল্পের আলো হাতে এগিয়ে যাওয়া মহাবিশ্বের যাবতীয় মহামানবের কাফেলায় নাম লেখাতে চেয়েছিলাম আমি। আর আমি অপেক্ষা করছিলাম রূপকথার পাতা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা কোন এক আশ্চর্য রাজকন্যার প্রিয়তম পুরুষ হবার আশায়। কিন্তু কোন রাজকন্যা আসেনি। বিথী নামের খুব সাদামাটা একটা মেয়ে এসেছিল। আর ওর সঙ্গে প্রেম হবার আগেই আমাকে খুব রতির নেশায় পেয়ে বসেছিল। একেবারেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা গোলগাল মুখ আর চাকমাদের মতো বোঁচা নাকের এই মেয়েটা আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে প্রেম ও সঙ্গমের নেশায় বিভোর এক ঘোর এনে দিয়েছিল। এরপর হুট করেই একদিন সে হারিয়ে গেল। বিথীর জন্যে অনেক কেঁদেছি আমি। নিজেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করেছি। এরপর আবারও আচমকা একদিন বিথীর সাথে দেখা হয়ে গেল। ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং কাঁপা কণ্ঠে জানতে চাইলাম, “এতদিন কোথায় ছিলে?” বিথী আমাকে চিনতে পারে নাই। আশ্চর্য। কিন্তু না, আমি বরং শুরু থেকেই শুরু করি, নয়তো খেই হারিয়ে ফেলব।
জন্ম: ১৫ই পৌষ মধ্যরাত্রি; পৃথিবীর যেকোনো নামিদামী শহর হতে অন্তত কয়েকশ মাইল দূরে, অতলান্ত এক হাওর-জনপদের আদিম ও অকৃত্তিম কৃষক পরিবারে। ঢাকায় আগমণ: ২০০৬ সালে। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ হতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এখন এমফিল গবেষণা ও শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগে Bangladesh Studies: History & Culture শাস্ত্রের লেকচারার। ২০১৩ সালে বেশ কয়েকটি সাহিত্য সাময়িকী এবং জাতীয় দৈনিকে গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাহিত্য জগতে পদার্পণ। শিক্ষানবিশ চলচ্চিত্রকার এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন ঘাসফড়িং, জাজ মাল্টিমিডিয়া সহ আরও কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে। প্রথম উপন্যাস, “ঝড় ও জনৈক চিন্তাবিদ" প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। প্রথম উপন্যাসের মাধ্যমেই লেখক এদেশের বিদগ্ধ ও বলিষ্ঠ পাঠক মহলের দৃষ্টি ফেরাতে সক্ষম হন। সাহিত্যে শক্তিমান এক কথাশিল্পীর অবশ্যম্ভাবী আগমনী-বার্তা ঘোষিত হয়। ঐতিহাসিক পটভূমিতে লেখা তাঁর দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস "অগ্নিপুরাণ" পাঠকের ভালোবাসায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ সালের অন্যতম বেস্টসেলার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। অগ্নিপুরাণ-এর ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় কলকাতার খোয়াবনামা থেকে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বইটি বিপুল আগ্রহ ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রেম ও যুদ্ধদিনের গল্পকার মুহম্মদ নিজাম পুরনো এবং দুষ্প্রাপ্য বই, পুঁথি, গান, কেচ্ছা ও কিংবদন্তী সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন। অবসরে ভালোবাসেন প্রিয়তম মানুষদের সঙ্গে আড্ডা, বই এবং বৃক্ষের সান্নিধ্য।