‘জীবন বাবু একলা হাঁটেন’ বইটির অংশ বিশেষ অধ্যাপক ড. কবির শামসকে কেউ একজন মেসেঞ্জারে লিখেছে, ‘স্যার, আমি কিছু বলতে চাই।’ ড. শামসের জন্য এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার যে, তাঁকে কেউ কিছু বলতে চাচ্ছে বা তাঁর কাছে কেউ কিছু জানতে চাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষার্থী বিষণ্নতায় ভুগছে, তখন তার স্যারের কথা মনে পড়ে। স্যারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললে তার বিষণ্নতা কেটে যায়। কেউ একটা বই পড়তে পড়তে খেই হারিয়ে ফেলেছে, মূল সুরটা ধরতে পারছে না, তখন স্যারের শরণাপন্ন হয়। তিনি তাকে সুরটা ধরিয়ে দেন। কিংবা কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবছে তখন স্যারের সাথে কথা বললে তিনি তাকে সুপরামর্শ দিয়ে জীবনের পথে ফিরিয়ে আনেন। এ-রকম ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে।
কিন্তু অপরিচিত কেউ একজন—যার প্রোফাইল নেইম জীবন বাবু একলা হাঁটেন—সে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। এটা তো তাঁর পক্ষে বোঝা মুস্কিল যে, সে কী বলতে চাইছে! ড. কবির শামস কী বলবেন ভেবে পেলেন না। তবে বিষয়টি এড়িয়ে যেতেও পারলেন না। তিনি জীবন বাবু একলা হাঁটেন নামক ব্যক্তির টাইমলাইনে ঢুকলেন। জীবন বাবু একলা হাঁটেনের প্রোফাইল পিকচার এবং কভার ফটো হিসেবে একটিমাত্র ছবি দেওয়া আছে—সেটি কবি জীবনানন্দ দাশের। একটি স্ট্যাটাসও দেখতে পেলেন, ওই একটিই কথা—আমি কিছু বলতে চাই।’ একটু আগেও তিনি জীবন বাবু একলা হাঁটেনকে যতটা ফেইক মনে করেছিলেন, এখন আর তেমনটা মনে করতে পারলেন না। বরং তিনি জীবন বাবু একলা হাঁটেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই দিলেন, ‘প্লিজ বলুন।’ জীবন বাবু অনলাইনেই ছিল, উত্তর এল, ‘আমি যা বলতে চাই তা বলতে পারি না।’ কী মুস্কিল! এমন পরিস্থিততে পড়বেন জানলে তো তিনি রিপ্লাই দিতেন না। জীবন বাবু আবার লিখল, ‘প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না স্যার। সত্যিই আমি যা বলতে চাই, তা বলতে পারি না।’ ‘আমি কি আপনাকে চিনি?’ লিখলেন ড. শামস। ‘জি না স্যার।’ ‘তো আমি কি আপনার পরিচয়টা পেতে পারি?’ ‘অবশ্যই স্যার। আমার নাম সেঁজুতি। সেঁজুতি সর্বনাম। আমি ইডেন কলেজের ছাত্রী।’ ড. কবির শামস নড়েচড়ে বসলেন। লিখলেন, ‘কোন সাবজেক্ট? কোন ইয়ার?’ ‘সোশিওলোজি। অনার্স ফাইনাল ইয়ার।’ ‘তোমার হোম ডিস্ট্রিক কোথায়?’ ‘নেত্রকোনা।’ ‘তুমি কি সত্যিই সেজুতি? আই মিন তুমি কি সত্যিই একটি মেয়ে?’ হাসির ইমো ভেসে উঠল, ‘জি স্যার। আপনি চাইলে এখানে একটি ছবি দিতে পারি।’ ‘আচ্ছা দাও।’ কিছুক্ষণের মধ্যে চ্যাটিং বক্সে একটি ছবি এল। সেলফি। টি-শার্ট পরা একটি মেয়ের ছবি। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। বেশ সুন্দরী। ‘স্যার এটাই আমি। আর এইমাত্র ছবিটা তুলে দিলাম। আশা করি আমাকে নিয়ে আপনার আর সন্দেহ থাকবে না।’ ‘তো আমি তোমার জন্য কী করতে পারি?’ ‘আপনি চাইলে আমার জীবনটা বদলে যেতে পারে।’ ‘সেটা কীভাবে সম্ভব? তুমি তো তোমার সমস্যার কথাটিই বলতে পারছ না?’ ‘জি স্যার। সেটা সত্যি। তবে আপনি যদি অনুমতি করেন তো আপনাকে কল করতাম। আমার সাথে কথা বললে আপনি আমার ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পারবেন।’ ড. শামস চিন্তায় পড়ে গেলেন। কিছু লিখলেন না। কিঞ্চিৎ রহস্যের গন্ধও পেলেন। এরইমধ্যে সেজুতি লিখল, ‘কল করব স্যার?’ ড. শামস লিখলেন, ‘দশ মিনিট পরে কর।’ তিনি চিন্তা করার জন্য দশ মিনিট সময় নিলেন।
Mohiuddin Ahmed গল্পকার, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক। জন্ম ১৯৭৮ সালে, ধামরাই, ঢাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে এমএ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাংস্কৃতিক সংগঠন জলসিঁড়ি। নিজের লেখা বেশ কিছু মঞ্চ নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে চন্দ্রাবতী (মৈমনসিংহ গীতিকা থেকে) ও কবি (তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত) উল্লেখযোগ্য। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের অসুখ-বিসুখ গল্পটিকে চিত্রনাট্য দেওয়ার মাধ্যমে টিভি নাটকে তার যাত্রা শুরু। প্রচারিত নাটকের সংখ্যা প্রায় একশত। তিনি শিশুতোষ গল্পও লেখেন। পেশায় স্ক্রিপ্ট-রাইটার। সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন: জলসিঁড়ি প্রকাশিত গ্রন্থ- শাদা শাদা মেঘ খণ্ড খণ্ড প্রেম (গল্প) বিল্লাল হুসেন ওরফে বিল্যাই মিঞা (উপন্যাস)