এই ছোট বইটিতে আমরা আলোচনা করব বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম-কথা। এর লক্ষ্য হবে আমাদের রাষ্ট্র সচেতনতা বৃদ্ধি। আমি মনে করি আমাদের রাষ্ট্রিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্য এর প্রয়োজন আছে। বর্তমান রাষ্ট্র বাংলাদেশ একটা সুপ্রাচীন সুপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র নয়। আমাদের সামান্য ভুলের জন্যই এর সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বিলুপ্ত হতে পারে। আমি মনে করি আমাদের আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি এই পরিণতি রোধে হতে পারে বিশেষ সহায়ক। তাই এই লেখা। আমার বইটি পড়ে মনে হতে পারে একজন পেশাদার শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। আমি ই”ছা করেই বইটিকে এভাবে লিখতে যাচ্ছি। কারণ, আমি মনে করছি বইটিকে এভাবে লিখলেই আমার বক্তব্য অধিকাংশ পাঠকের কাছে সহজবোধ্য হবে। মনে রাখা কঠিন হবে না এর মূল প্রতিপাদ্য। জাতীয়তাবাদ শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় একটা মানসিক ঘটনা। এক রকম জাতীয়তাবাদকে বলা যেতে পারে আগ্রাসী (Aggressive)। আর এক প্রকার জাতীয়তাবাদকে বলা যেতে পারে আত্মরক্ষামূলক(Defensive)। আমাদের জাতীয়তাবাদ হলো আত্মরক্ষামূলক। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এখন হিন্দুত্বকে নির্ভর করে হতে যাচ্ছে প্রচণ্ড আগ্রাসী। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে ভারতের এই আগ্রাসী জাতীয়তাবাদকে নিতে হবে বিশেষ বিবেচনায়। বর্তমান পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ১৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নৌ-পথে হলো প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার। সে আর আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি নয়। কিন্তু ভারত আছে আমাদের তিনদিক বেষ্টন করে। সে সহজেই আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হয়ে উঠতে পারে হুমকি। বইটিতে থাকবে আমাদের জাতিসত্ত্বার স্বরূপ ও তাকে রক্ষা করা নিয়েই প্রধান আলোচনা। বইটি লিখিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের আত্মরক্ষামূলক জাতীয়তাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে।
Abney Golam Samad ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৯ সালে রাজশাহীতে জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট প-িত, চিন্তাবিদ, বহুমাত্রিক লেখক এবং কলামিস্ট। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। পেশায় উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হলেও ইতিহাস ও শিল্পকলায় তিনি বিশেষ আগ্রহী। এ সব বিষয়ে তাঁর লেখালিখি রয়েছে যা মননশীল বক্তব্যে ঋদ্ধ। পরিণত বয়সে কলম ধরে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে ইতিহাসের অমূল্য উপাদান সংরক্ষণ কওে চলেছেন। ১৯৪৮-এ শিক্ষা সংঘ বিষ্ণুপুর থেকে বি. কোর্স পাশ করেন যা তখনকার মাধ্যমিক সমমান পাশ ছিলো। এরপর তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তেজগাঁও কৃষি ইনিস্টিটিউট থেকে কৃষিবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করার পওে তিনি বিলেতে পাড়ি জমান উদ্ভিদ রোগতত্ত্বের ওপরে গবেষণা করতে। ফ্রান্সে ৪ বছর গবেষণা করেন প্ল্যান্ট ভাইরাসের ওপরে। ১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এবনে গোলাম সামাদের পিতা মো.ইয়াসিন একজন স্টেশন মাস্টার ছিলেন। তাঁর মাতার নাম নছিরন নেসা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ের জনক। তিনি কলাম লেখক হিসেবে বাংলাদেশে সমাধিক পরিচিত। তিনি মূলত রাজনীতি-সমাজনীতি নিয়েই বেশি লিখতে পছন্দ করেন। ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং আমার দেশ পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক হিসেবে কাজ করেছেন অনেক দিন। তাঁর লেখায় মুক্তচিন্তার ছাপ লক্ষ করা যায়। তাঁর লেখায় গভীর ইতিহাসচেতনারও ছাপ রয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনৈতিক আনুগত্যেও অভাব তাঁর রচনাগুলোর বিশেষ আকর্ষণ। আছে এক ধরনের নৈর্ব্যক্তিকতা যা সচরাচর দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আত্মজৈবনিক রচনা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য: ‘শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী মনে হয়েছে একটি বহুগুণে গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এতে ধরা পড়েছে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে থাকা বামবুদ্ধিজীবীরা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে, পাকিস্তান আন্দোলনটা ছিল একটি সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। কিন্তু শেখ মুজিব তার জীবনীতে বলেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।’ কলাম লেখা ছাড়াও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ভিত্তিকপাঠ্য তালিকা এবং পাঠ্য তালিকার বাইরে তাঁর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত কিছু বইয়ের নাম উল্লেখ করা হলো: বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি, আত্মপক্ষ, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, বাংলাদেশ : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া, মানুষ ও তার শিল্পকলা, নৃ-তত্ত্বের প্রথমপাঠ, প্রাথমিক জীবাণুতত্ত্ব, বায়ান্ন থেকে একাত্তর, আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং আরাকান সংকট, ইসলামী শিল্পকলা, শিল্পকলার ইতিকথা, বাংলাদেশে ইসলাম ও ঐতিহ্য, বর্তমান বিশ্ব ও মার্কসবাদ, বাংলাদেশের মানুষ ও ঐতিহ্য, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, জীবাণুতত্ত্ব, উদ্ভিদ সমীক্ষা, নৃ-তত্ত্ব।