পি বি শেলী বলেছেন কবিরা পৃথিবীর লেজিসলেটর। অর্থাৎ একজন কবি তাঁর পঙক্তির মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানুষের জন্য মানবিক আইন তৈরি করে দেন। এটা কী করে সম্ভব? হ্যাঁ, প্রকৃত কবির এটিই কাজ। তিনি যা লেখেন তা ভবিষ্যতের মানুষ কথায় কথায় উদ্ধৃত করে, একে অন্যকে কবিতার অন্তর্নিহিত সত্যের মতো হয়ে উঠতে উৎসাহিত করে। তখনই কবিতা হয়ে ওঠে সামাজিক আইন, কবি লেজিসলেটর। কাজী জহিরুল ইসলাম যখন বলেন, ‘ছোট এক গাছ হামাগুড়ি দেয়, নেমে আসে ওর ডাল থেকে।/ অন্যটি তাকে কোলে তুলে নেয়/ দাঁড়িয়ে ছিল সে কাল থেকে’ অথবা ‘তখন একাকিত্ব ভয়ে কাঁপে,/ একাকিত্বের পাপে/ যখন তুমি ঘর ছেড়ে যাও’ আমরা সেই অন্তর্নিহিত সত্যকেই দেখি যা একজন কবিকে করে তোলে পৃথিবীর লেজিসলেটর। আজকাল তাকে বলতে শুনি, ‘এখন আমি কবিতাকে রোপন করার চেষ্টা করি বিটুইন দ্য লাইনস, বিটুইন দ্য ওয়ার্ডস। অন্যের কবিতার ভেতরেও কবিতার প্রাণ খুঁজি শব্দ ও পঙক্তির ভেতরে নয়, বাইরে’। একজন শক্তিমান কবি নানান ফর্মেটে স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠেন। কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতায় সকল ছন্দের শুদ্ধতা যেমন আছে, নিরেট গদ্যও আছে, যেমন প্রতীকাশ্রয়ী আবার তা সরাসরি। শিল্পের দাবি মিটিয়েই তিনি এই পৃথিবীর মানুষের কবি। কবিতাসমগ্র-৩ এ এসে আরো অধিক পরিণত, অধিক সাহসী। এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত ২৯৩টি কবিতায় উন্মোচিত হয়েছে একজন প্রকৃত আধুনিক কবির পূর্ণ অবয়ব, যেখানে দ্রোহ, প্রেম, কাম, ক্রোধ, দেশ, মানবতা, পৃথিবী, প্রকৃতি সবই আছে, কখনো তা তীব্র, কখনো প্রচ্ছন্ন।
কাজী জহিরুল ইসলাম। লিখেন গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি ও প্রবন্ধ। পেশাগত প্রয়ােজনে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর বহু দেশ। দীর্ঘ দিন খণ্ডকালীন সাংবাদিকতা করেছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থসমূহ : উড়ালগদ্য (কলাম), বিহঙ্গপ্রবণ (আত্মজৈবনিক উপন্যাস), জানা-অজানা আফ্রিকা (ভ্রমণ), গজমােতির দেশ আইভরিকোস্ট (ভ্রমণ) After a Long way (কাব্যগ্রন্থ), ছয় ঠ্যাংঅলা নীল সাপ (গল্প) ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ কবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার ১৪০৬ এবং ভ্রমণ সাহিত্যে ড. দীনেশ চন্দ্র সেন পদক ২০০৮-এ ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে জাতিসংঘের একজন আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা হিসেবে আমেরিকায় কর্মরত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। স্ত্রী মুক্তি, পুত্র অগ্নি এবং কন্যা জলকে নিয়ে লেখক বসবাস করছেন কাব্যময় সংসারে।